বাল্যবিয়ে: আসামে গ্রেপ্তার ২৪৪১
ভারতের আসাম রাজ্যের মন্ত্রিসভা সম্প্রতি ১৪ বছরের কমবয়সী মেয়েদের বিয়ে করা পুরুষদের গ্রেপ্তারের প্রস্তাবনা পাস করেছে। বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধকরণ আইন ২০০৬-এ ১৪-১৮ বছরের মধ্যে মেয়েদের বিয়ে করা পুরুষদের গ্রেপ্তারের বিধান রয়েছে। যারা তাদের বিয়ে করেছেন তাদেরকে এ আইনে গ্রেপ্তার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে রাজ্যটির মন্ত্রিসভা।
এ ছাড়া এই আইনের অধীনে ১৮ বছরের নিচে মেয়েদের বিয়ে করাও নিষিদ্ধ করেছে সরকার। যেসব মেয়েদের বয়স ১৪ বছরের নিচে হবে তাদের সংশোধন কেন্দ্রগুলোতে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে মন্ত্রিসভা। ফলে আসামে বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিবাদ বারাক ভ্যালি, মরিগাঁও এবং ধুবরিতে ছড়িয়েছে এবং চতুর্থ দিনের এই আন্দোলনে ও বাল্যবিয়ে করা মোট ২ হাজার ৪৪১ জন পুরুষকে আজ (৬ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বাল্যবিয়ে নিষিদ্ধকরণ আইন ২০০৬-এর অধীনে মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
পুলিশের একটি বিবৃতিতে আরও জানানো হয়েছে, পুরো রাজ্যজুড়ে মোট ৪ হাজার ৭৪টি বাল্যবিয়ের এফআইআর দাখিল করা হয়েছে।
পুলিশের মুখপাত্র শর্মা জানিয়েছেন, আসামে বাল্যবিয়ে প্রতিবাদে আকস্মিক বিক্ষোভ চলমান রয়েছে। এর আগে তিনি জানিয়েছেন যে, এই ঢেউ ২০২৬ সালের প্রাদেশিক নির্বাচন পর্যন্ত চলবে। এই কঠোর অবস্থা বিরোধী দলগুলোর কাছ থেকে প্রতিবাদের মুখোমুখি হয়েছে। আক্রান্ত পরিবারগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষোভ ও সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে। প্রতিবাদকারী সংগঠিত হয়েছেন নাগোন জেলাতেও।
ধুবরিতে প্রতিবাদে যুক্ত রেশমা খাতুন বলেছেন, ‘আমাদের পরিবারের পুরুষদের পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। দেখাশোনার জন্য কাউকে না রেখে ধরে নিয়ে গেছে।’
রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) বিকাল পর্যন্ত বিশ্বনাথ জেলায় ১৩৯ জনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। বারপেতা জেলার ১৩০ জন পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ধুবরিতে ১২৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাল্যবিয়ের জন্য সর্বোচ্চ ৩৭৪টি এফআইআর দাখিল করা হয়েছে ধুবরিতে। হোজাইতে ২৫৫টি এবং মরিগাঁওতে ২২৪টি বলে পুলিশ সূত্রে জানানো হয়েছে।
বাল্যবিয়ের মামলাগুলোতে কামরুপ জেলার রানগিয়াতে সাতজন পুরুষকে জামিন দেওয়া হয়েছে। সাবডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট তাদের জামিন দিয়েছেন বলে একজন আইনজীবী উল্লেখ করেছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘আজ দিনের শেষে আরও অনেকের জামিন হতে পারে।’ তাদের সবার বিপক্ষে মামলাগুলো বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধকরণ আইনের অধীনে করা হয়েছে। তারা জামিনের ধারাগুলোতে জামিন লাভ করেছেন। তবে যারা শিশু যৌন নির্যাতন ও নিপীড়নের ধারাগুলোতে গ্রেপ্তার হয়েছেন, তারা জামিনের অযোগ্য বলে উল্লেখ করেছে পুলিশ।
এই গণবিক্ষোভের পেছনের কারণগুলো সম্পর্কে মুসলমানদের অল-ইন্ডিয়ান মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিনের প্রধান আসাদুদ্দিন কোরাইশি বলেছেন, ‘আসাম সরকারের লেখাপড়ার হার বাড়ানোর উপর জোর দেওয়া উচিত ছিল যেহেতু এটিই বাল্যবিয়ে বন্ধ করে।’
তিনি আরও জানিয়েছেন, বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, ‘আপনি যদি বাল্যবিয়ে রোধ করতে চান, আপনাকে প্রচুর পরিমাণে বিদ্যালয় খুলতে হবে। তবে আপনি (সরকার) সেটি করেননি। আপনি মাদ্রাসাগুলোও বন্ধ করে দিয়েছেন, যারা কিছু ধরনের শিক্ষা প্রদান করে।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বাড়ির পুরুষদের গ্রেপ্তার করায় পড়ে থাকা নারীদের কারা দেখাশোনা করবেন?’
আসামের কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট ভুপেন বোরা এই বিষয়কে মোকাবিলা করার জন্য একটি মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন ছিল বলে জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, ‘আমরা বাল্যবিয়ের বিরোধিতা করি। তবে পরিবারগুলোকে সর্বশান্ত করে দেওয়ার লাভ কী? তাদের বাড়ন্ত শিশুরা আছে। এটি জনপ্রিয়তার একটি উপায় ছাড়া আর কিছু নয়।’
আসাম জাতীয় পরিষদের প্রধান লিওরেনজ্যোতি গোগয় বলেছেন, ‘এই গণপ্রতিবাদের বিপক্ষে সরকার গ্রেপ্তারকৃতদের পরিবারগুলোর উপর প্রভাব বিবেচনা না করেই অগ্রবর্তী হয়েছে। সরকারের স্ত্রীদের পরিস্থিতিগুলো চিন্তা করা উচিত ছিল। পরিবারগুলোর কর্তারা গ্রেপ্তার হলে তাদের কী অবস্থার মোকাবিলা করতে হবে? এটি এলোমেলোভাবে গৃহীত পদক্ষেপ।’
দ্য অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ) শনিবার অভিযোগ করেছে, আসাম সরকারের বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থা প্রয়োজনীয় নিয়মাবলির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল না। আসামে মা ও শিশুর উচ্চ মৃত্যুহার রয়েছে। সেখানে বাল্যবিবাহ একটি সাধারণ বিষয় বলে উল্লেখ করেছে ভারতের দ্য ন্যাশনাল ফ্যামেলি হেলথ সার্ভে।
ওএফএস/