পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট পারভেজ মোশাররফের মৃত্যু
পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) পারভেজ মোশাররফ মারা গেছেন। রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে দুবাইয়ের এক হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর।
একজন সিনিয়র নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও পরিবারের বরাত দিয়ে রবিবার পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদনে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘রবিবার সকালে পারভেজ মোশাররফ দুবাইয়ের একটি হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।’
তার মৃত্যুর পর আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ দপ্তরের (আইএসপিআর) এক বিবৃতে সব বিভাগের চিফ অব স্টাফরা গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সামরিক বাহিনীর বিবৃতে নিহতের আত্মার শান্তির কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া টুইটারে সিনেটের চেয়ারম্যান সাদিক সানজরানিও গভীর শোক ও নিহতের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি টেইটে লেখেন, ‘আল্লাহ নিহতকে বেহেস্ত দান করুন এবং শোকাহত পরিবারকে ধৈর্য ধারণ করতে শক্তি দান করুন।’
পিটিআইয়ের নেতা ও পাকিস্তানের সাবেক মন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরী বলেন, ‘পারভেজ মোশাররফ মহান মানুষ ছিলেন। সবসময় পাকিস্তানকে প্রাধান্য দেওয়া ছিল তার আদর্শ।’
২০১৮ সাল থেকেই তার অসুস্থতা শুরু হয়। সেসময় অল পাকিস্তান মুসলিম লিগ ঘোষণা দেয়, তিনি দূরারোগ্য অ্যামিলোইডোসিস রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। শারীরিক অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ায় গত ২০২২ সালের মে মাসের মাঝামাঝি দুবাইয়ের হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। ভর্তির তিন সপ্তাহের মধ্যেই অসুস্থতা গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল।
চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, যকৃত, কিডনিসহ অভ্যন্তরীণ অধিকাংশ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে গেছে মোশাররফের এবং যে শারীরিক অবস্থার মধ্যে দিয়ে তিনি যাচ্ছিলেন, তা থেকে ফের সুস্থ হয়ে ফেরা তার জন্য অসম্ভব। পরিবারের সদস্যরাও তার সুস্থতার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
সে সময় তার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে পরিবারের দেওয়া এক বিবৃতিতে জানানো হয়, ‘তার শারীরিক অবস্থা খুব জটিল হয়ে গিয়েছিল যেখান থেকে সেরে উঠা সম্ভব নয়। নানা অঙ্গপ্রত্যাঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করছে না। তার জন্য প্রার্থনা করুন।’
ব্রিটিশ ভারতের দিল্লিতে জন্ম হয় পরভেজ মোশাররফের। তবে বেড়ে উঠেছেন পাকিস্তানের করাচিতে। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের লাহোর জেলার ফরম্যান ক্রিশ্চিয়ান কলেজ থেকে গণিতে স্নাতক ও যুক্তরাজ্যের রয়্যাল কলেজ অব ডিফেন্স স্টাডিজে পড়াশোনা করেন। এরপর পাকিস্তান সেনাবানিহীতে যোগ দেন তিনি। একপর্যায়ে পাকিস্তানের শাসকের আসনে বসেন তিনি।
১৯৯৯ সালে রক্তাক্ত এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে ক্ষমতাচ্যুত করে দেশের ক্ষমতা দখল করেন পারভেজ মোশাররফ। আনুষ্ঠানিকভাবে নিজেকে দেশের প্রেসিডেন্ট ঘোষণা করেন ২০০১ সালে।
২০০৮ সালে অভিশংসন এড়াতে রাষ্ট্রপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন মোশাররফ। তারপর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। ছয় বছর ধরে তিনি সপরিবারে দুবাইয়ে বসবাস করছিলেন বলে ডনের প্রতিবেদনে জানানো হয়।
পাকিস্তানের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টো ২০০৭ সালে নিহত হয়েছিলেন। ধারণা করা হয়, এ ঘটনায় মোশাররফের হাত ছিল এবং তার নির্দেশেই গুপ্তহত্যার শিকার হন বেনজির। ২০১৩ সালে রাষ্ট্রদ্রোহের একটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ডও ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানের একটি আদালত। পরে অবশ্য সেই দণ্ড প্রত্যাহার করা হয়।
এসএন