তিন দিনে আদানি গ্রুপের ক্ষতি ৫০ বিলিয়ন ডলার
জালিয়াতির অভিযোগে ৫০ বিলিয়ন ডলার খুইয়েছে এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি গৌতম আদানির আদানি গ্রুপ। বাংলাদেশি টাকায় যার মূল্য ৫ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা।
বার্তা সংস্থা সিএনএন শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) তাদের এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ আদানি গ্রুপের জালিয়াতির প্রতিবেদন প্রকাশের পর চলতি সপ্তাহে গৌতম আদানির ব্যবসায়িক সাম্রাজ্যের মূল্য ৫০ বিলিয়ন ডলার কমে গেছে।
এমন এক সময়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হল যেসময়ে নতুন শেয়ার ছাড়ার মাধ্যমে বাজার থেকে আড়াই বিলিয়ন ডলার তোলার পরিকল্পনা করছিল আদানি গ্রুপ। তবে হিন্ডেনবার্গের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আখ্যায়িত করেছে আদানিগ্রুপ এবং তারা আইনি পদক্ষেপের বিষয়ে বিবেচনা করছে বলে জানিয়েছে।
কিন্তু ইতোমধ্যেই কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রয়ে ভাটা পড়েছে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) থেকে শুরু হওয়া ভাটা শুক্রবার আরও ত্বরান্বিত হয়েছে। বিশেষ করে মার্কিন হেজ ফান্ড বিলিয়নার বিল অ্যাকম্যান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের প্রতিবেদনটি বিশ্বাসযোগ্য বলে বিবৃতি দেওয়ার পর থেকে। তিনি এক টুইট বার্তায় লিখেছেন 'হিন্ডেনবার্গের তদন্ত প্রতিবেদনটি অত্যন্ত বিশ্বাসযোগ্য এবং অত্যন্ত ভাল গবেষণা.'
গেল মঙ্গলবার (২৪ জানুয়ারি) আদানি গ্রুপের উপর একটি সামষ্টিক তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। যেখানে আদানি গ্রুপকে এক দশক ধরে শেয়ার প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়। মার্কিন এই সংস্থার দাবি, আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলো যে সংক্ষিপ্ত অবস্থান নিয়েছিল তা তাদের পুঁজি থেকে সামান্য কিছু লাভ দিতে পারে।
এই কোম্পানিগুলোর শেয়ারমূল্য গত কয়েক বছরে ৫০০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে বুধবার ভারতের শেয়ার বাজার চালু হওয়ার পরই শেয়ারে ধ্বস নামে। বৃহস্পতিবার বাদ দিয়ে শুক্রবার ফের ট্রেডিং শুরু হলে একই চিত্র দেখা যায়।
শুক্রবার আদানি গ্রুপের সাতটি তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে আদানি ট্রান্সমিশন, আদানি টোটাল গ্যাস এবং আদানি গ্রিন এনার্জি এই তিনটি কোম্পানির প্রতিটির শেয়ার ২০ শতাংশ কমেছে এবং সাত কোম্পানির সমষ্টির ফ্ল্যাগশিপ কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজের শেয়ার কমেছে ১৮ শতাংশ। কেবল শুক্রবারেই ক্ষতি প্রায় ৩৯ বিলিয়ন ডলার।
হিন্ডেনবার্গের দাবি তাদের প্রতিবেদন শতভাগ সত্য এবং এ বিষয়ে তারা যে কোনও আইনি পদক্ষেপের মুখোমুখি হতে রাজি আছে। এক টুইট বার্তায় মার্কিন এই সংস্থা বলেছে, আদানি যদি সত্যিই মামলা করতে চান তাহলে যেখানে আমরা কাজ করি, যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা করুক, আমাদের কাছে প্রচুর নথি রয়েছে যা দিয়ে আমরাও আইনিভাবে লড়ব।
ব্লুমবার্গ বিলিয়নার্স ইনডেক্স অনুসারে, আদানি এখনও এশিয়ার সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি যার ব্যক্তিগত সম্পদ ১১৩ বিলিয়ন ডলার। এশিয়ার দ্বিতীয় ভারতীয় উদ্যোক্তা মুকেশ আম্বানির চেয়ে ৩০ বিলিয়ন ডলার বেশি। তবে শুক্রবারের এই লোকসান মুকেশ আম্বানি ও আদানির ব্যবধান কমিয়ে দেবে।
বিশ্বের চতুর্থ ধনকুবের শিল্পপতি গৌতম আদানি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার গণ্ডি পেরোতে পারেননি। ৩০ বছর আগে ব্যবসায়িক যাত্রা শুরু করা ৬০ বছর বয়সী এই ধনকুবের ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বেশ কাছের লোক বলেও শোনা যায়।
/এএস