ভারতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্রের ১৩৬তম জন্মদিন পালিত
অবিভক্ত ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম মহানায়ক ‘নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর ১৩৬তম জন্মদিন’ পালন করেছে ভারতবাসী। সোমবার (২৩ জানুয়ারি) তার জন্মদিনে রাজধানী নয়াদিল্লীতে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর বিরাট একটি দৃষ্টিনন্দন মূর্তি উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এর পাশাপশি বঙ্গোপসাগরের ভেতরে দুর্গম আন্দামান ও নিকোবরে নেতাজির নামে একটি স্মৃতিসংগ্রহশালা গড়ে তোলার কাজ শুরু করেছেন।
নেতাজিকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় মোদী লিখেছেন, ‘ভারতীয় স্বার্ধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আমাদের ভারতের স্বাধীনতার জন্য অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। তিনি তার জীবনের সর্বস্বের বিনিময়ে ও ভয়াবহ কষ্ট সহ্য করে উপনিবেশিক ব্রিটিশ শাসনের বিপক্ষে আজীবন সংগ্রাম করেছেন। এজন্য চিরকাল তিনি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এছাড়াও তিনি তার ভাবনা, লেখা ও কাজের বিনিময়ে নিজের উদ্দেশ্য ভারতবাসীকে প্রদান করে গিয়েছেন।’
ব্রিটিশ ভারতের ইতিহাসের অন্যতম বিপ্লবী নেতা ও সর্বকালের সেরা ভারতীয় মুক্তিযোদ্ধা সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন ধনী বাঙালি পরিবারের সন্তান। ১৮৮৭ সালের ২৩ জানুয়ারি ওড়িষ্যা অঙ্গরাজ্যের কটকে তার জন্ম। ‘নেতাজি’ নামের এই বিখ্যাত নেতা বিপুল পরিমাণ বিপ্লবী ও আপামর সমর্থক রেখে গিয়েছেন। তিনি ডান ও বামপন্থী উভয় দলের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ছিল ভারতের স্বাধীনতা ও ব্রিটিশদের তাড়ানো।
প্রায় ২০০ বছরের ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্তির জন্য জীবনের শেষ দিকে সুভাষচন্দ্র বসু স্লোগান তুলেছেন, ‘আপনারা আমাকে রক্ত দিন, আমি আপনাদের স্বাধীনতা এনে দেব।’ তবে এই স্বাধীনতার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায় পড়াশোনা করেছেন সুভাষ চন্দ্র। এরপর ব্রিটেনের বিশ্বখ্যাত কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। তৎকালীন ব্রিটেনে প্রশাসনিক চাকরিও করেছেন। তবে মাত্র ২৪ বছর বয়সে স্বদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে জীবন উৎসর্গ করতে ফিরে এসে মহাত্মা গান্ধী ও জওহরলাল নেহেরুর জাতীয়তাবাদী আন্দোলনে যোগ দেন। মাত্র ৪২ বছর বয়সে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সর্বকনিষ্ঠ প্রেসিডেন্ট বা সভাপতি নির্বাচিত হন।
তবে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু অখণ্ড ভারতে অকল্পনীয় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন মূলত তার জীবন ও ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলনের জন্য। ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের উত্তাল সময়কালে নেতাজি নামে খ্যাত সুভাষচন্দ্র বসুর জনপ্রিয়তা এমনকি গান্ধীসহ অন্যান্য সকল নেতাকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। আজও তিনি তার কাজের সূত্রে নমস্য হয়ে আছেন দেবতার মতো। নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু স্বাধীনতার প্রয়োজনে ব্রিটিশের শত্রুকে নিজের বন্ধু বলে স্বীকৃতি দিয়েছেন।
তবে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র সংগ্রামের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে ১৯৩৯ সালে সুভাষচন্দ্র বসু তার সমর্থকদের নিয়ে কংগ্রেস ছেড়ে দিলেন। এরপর তিনি সশস্ত্র যুদ্ধে নামলেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য তৎকালীন বিশ্বযুদ্ধের আরেকটি অংশ এডলফ হিটলারের শাসনাধীন জার্মানি ও সম্রাট হিরোহিতোর জাপানের সঙ্গে মৈত্রী করলেন। অনুসারীদের নিয়ে আফগানিস্তানের কাবুল হয়ে ব্রিটিশদের সঙ্গে লড়তে, লড়তে নাজি জার্মানি ও অক্ষ শক্তি জাপান সফর করেছেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কালেই তিনি ১৯৪১ সালে সমাজতান্ত্রিক সোভিয়েত ইউনিয়নে গিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি জার্মানিতে হিটলারের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেছেন। রাজধানী বার্লিনে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম এই সশস্ত্র ভাবধারার নেতা ‘ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার’ স্থাপন করেছেন। জার্মান সরকার তাকে এই আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করেছে।
জার্মানিতেই অষ্ট্রিয়ান বান্ধবী এমিলিয়া শ্যাংকেলের সঙ্গে দেখা হয়েছিল নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর। তারা বার্লিনে বিয়ে করেছেন ও তাদের একমাত্র সন্তান অনিতা বসু একজন নামকরা অথনীতিবিদ।
১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু রহস্যজনকভাবে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন। তার দলের অনেক সদস্য ব্রিটিশদের হাতে যুদ্ধবন্দী হয়ে সাজা খেটেছেন।
ওএফএস/এএস