অধিকার ও স্বীকৃতির দাবিতে কলকাতায় খ্রিস্টানদের শোভাযাত্রা
গির্জা এবং দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর সমাজ, প্রদেশ ও রাষ্ট্রের উন্নয়নের অবদানের স্মরণে এবং স্বীকৃতির দাবীতে বিভিন্ন ধর্ম ও বিশ্বাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, চিকিৎসক, পেশাজীবি এবং সাধারণ মানুষ গতকাল শুক্রবার (২০ জানুয়ারি) কলকাতায় এক বিরাট শোভাযাত্রায় অংশ নিয়েছেন। তারা ভারতবাসীকে এই প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার অবদান মনে করিয়ে দিয়েছেন। শোভাযাত্রাটির আয়োজক ভারতের পশ্চিমবঙ্গের ‘দি বেঙ্গল খ্রিস্টান কাউন্সিল’।
সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল থেকে ১ হাজারেরও বেশি নানা বয়সের নারী, পুরুষ ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে তাদের এই শান্তি শোভাযাত্রাটি শুরু হয়।
আয়োজক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কলকাতার সেন্ট পলস ক্যাথেড্রাল সেন্ট পলের গির্জা থেকে তাদের এই কর্মসূচি শুরু হয়েছে। যেখানে বর্ণবাদ, শ্রেণীবিভাজন ও ধর্মীয় ও আঞ্চলিক বিভাজনের উর্ধ্বে উঠে তাদের কার্যক্রমের প্রকাশ ঘটেছে ও এর বিপক্ষের কাজগুলোর নীরব প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই ভারতের কলকাতা এবং আশেপাশের গির্জা এবং খ্রিস্টানদের পরিচালিত প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও উপকারভোগী।
কলকাতার বউবাজারের লেবুতলার ইউনিয়ন চ্যাপেল স্কুলের শিক্ষার্থী আদ্রিজা ভট্টাচার্য্য তার সহপাঠিনী বন্ধু ভ্যালেন্টিনা ডি’সুজার সঙ্গে লেনিন সরণির সামনে তাদের বিদ্যালয় হতে জওহরলাল নেহেরু রোড ধরে অন্যান্যদের সঙ্গে হেঁটে গিয়েছেন। একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ভ্যালেন্টিনা ডি’ সুজা বলেছেন, ‘আমাদেরকে বাইবেল যেটি শেখায় সবার আগে, সেটি হলো সবার সঙ্গে একাত্ন হও। এটিই হলো আমাদের বিদ্যালয়ের লোগো। আমাদের অন্যান্য সব ধর্মবিশ্বাসের সমান মর্যাদার সহপাঠীরা রয়েছে এবং আমরা সবাই মিলে সবসময় একটি পরিবার। এখানে এই বার্তাটি দৃঢ়ভাবে ঘোষণা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।’
তাদের বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক জানিয়েছেন, ‘এই প্রতিবাদ গির্জাগুলো যে দুটি বিষয়ের পর্যালোচনার জন্য দাঁড়িয়েছে নিরবে-অন্তর্ভুক্তিকরণ ও তাদের বিদ্যালয়গুলো থেকে কোনো ছাত্রীকে যেন হিজাব বা কোনো অলংকার পরা মেয়েকে বের করে দেওয়া না হয়।’ হিজাবের বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য ভারতকে চিনেছে বিশ্ব।
গির্জা পরিচালিত বেনিয়াপুকুরের আচার্য জগদীশ চন্দ্র বসু রোডের প্র্যাট মেমোরিয়াল স্কুলের শিক্ষিকা দেবলিনা নাগ বিষয়গুলোর প্রতি সমর্থন করে জানিয়ে বলেছেন, ‘অন্যান্য ধর্ম ও বর্ণবিশ্বাসের মানুষদের না গ্রহণ করার এই বার্তাগুলো এই দেশকে তৈরি ও বিকশিত করার ক্ষেত্রে একটি জটিল সমস্যা এবং এমন বিষয়গুলো আরও বেশি করে তুলে ধরা প্রয়োজন এবং সবার সামনে আরও নিয়ে আসা দরকার বিভেদ সৃষ্টি করার সংস্কৃতিকে পরাজিত করার জন্য।’
শান্তি শোভাযাত্রাটি ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার পাড়ি দিয়েছে মানুষ। গিয়েছে মায়ো রোডের গান্ধী ভাস্কর্যের নিচে। ‘আমরা একটি ধর্মনিরপেক্ষ দেশ’-বলেছেন রেভারেন্ড প্যাট্রিয়শ ক্যানিং, তিনি কলকাতার বিশপ। উচ্চপদস্থ খ্রিস্টিয় এই যাজক নিরব ও অহিংস অগ্রযাত্রাটিতে নেতৃত্ব দিয়েছেন।
দি বেঙ্গল ক্রিষ্টিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট রেভারেন্ড ফাদার ক্যানিং র্যালি শেষে তার আলোচনায় বারবার বলেছেন, ‘অন্য যেকোনো সম্প্রদায়ের চেয়ে এই দেশ ও জাতিকে তৈরি করতে অনেক বেশি অবদান রেখেছেন মুসলিম ও খ্রিস্টানরা।’
তিনি আরও বলেছেন, ‘সংখ্যালঘুরা হতে পারেন খ্রিস্টান বা মুসলিমরা, মহানুভব হয়ে এই জাতি ও দেশকে নির্মাণের জন্য অবদান রেখেছেন ও রেখে চলেছেন, তাদের প্রত্যেকে অবশ্যই তাদের প্রাপ্য সম্মান ও স্বীকৃতি দিতে হবে।’বিশপ ক্যানিং আরো বলেছেন, ‘আমি কেবল খ্রিস্টানদের একার অবদানের কথা আলোচনা করছি না। খ্রিস্টানদের এই দেশে প্রবেশের আগে আমাদের মুসলিম ভাই ও বোনেরা বৃহৎ অবদান রাখতে পেরেছেন। তাদের অবদানগুলো আজো ছড়িয়ে আছে আমাদের স্থাপত্যকর্মে, খাবারের ভেতরে এবং সংস্কৃতিতেও। অবশ্যই এই বিষয়গুলোসহ তাদের, আমাদের স্বীকৃতি দিতে হবে।’ তিনি এই বক্তব্যটি প্রদান করেছেন আলীপুর দুয়ার থেকে নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ ও কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী জন বারলার উপস্থিতিতে।
বিশপ ক্যানিং তার আলোচনায় আরো জানিয়েছেন যে, মন্ত্রী জন বারলা বাংলা (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে নির্বাচিত একজন খ্রিস্ট ধর্মের অনুসারী হিসেবে ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও অবস্থান থেকে এই শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছেন।
ওএফএস/এএস