৫০ হাজার বছর পর খালি চোখে দেখা দিচ্ছে যে ধূমকেতু
একটি বিরল ধূমকেতু পৃথিবী এবং সূর্যকে অতিক্রম করবে আগামী মাসের শুরুতে। পৃথিবী থেকে যে কেউ দূরবীন ছাড়া সহজেই সেটিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন। এর ফলে ৫০ হাজার বছর পর প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসী খালি চোখেই ধূমকেতু দেখতে পারবে।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২১ সালের মার্চে প্রথমবার ধূমকেতুটিকে বৃহস্পতি গ্রহের পাশ দিয়ে যেতে দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াভিত্তিক সংস্থা জুইকি ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি সেই ধূমকেতুটির নাম দেয় সি/২০২২ই৩ (জেডটিএফ)।
সৌরজগতের সীমানা থেকে যাত্রা শুরুর পর ধূমকেতুটি ১২ জানুয়ারি সূর্যের সবচেয়ে কাছে আসবে এবং আগামী ১ ফেব্রুয়ারি পৃথিবীর সবচেয়ে নিকটবর্তী হবে।
একটি ভালো দূরবীন দিয়ে ধূমকেতুটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। তবে আকাশ পরিষ্কার থাকলে এবং শহরের আলো বা চাঁদের আলো না থাকলে সেটি খালি চোখেই ধরা পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
প্যারিসের জ্যোতির্বিজ্ঞানী নিকোলাস বিভার বলেন, ‘পূর্ণিমার কারণে খালি চোখে দেখা না গেলেও, ধূমকেতুটি ধূলিকণা ও এমিট এবং সবুজ আভা দিয়ে তৈরি। জানুয়ারির ২১-২২ তারিখে জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের জন্য এটি পর্যবেক্ষণের ভালো একটি সুযোগ হবে। তবে আগামী ১০ ফেব্রুয়ারি সবার সামনে আরেকবার ধূমকেতুটি খালি চোখে দেখার সুযোগ থাকবে। তখন সেটি মঙ্গল গ্রহের কাছাকাছি যাবে।’
২০২০ সালের মার্চে নিওওয়াইজ এবং ১৯৯৭ সালে হেল-বপ নামের একটি ধূমকেতু পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা গিয়েছিল। হেল-বপের ব্যাস ছিল প্রায় ৬০ কিলোমিটার। কিন্তু সর্বশেষ যে ধূমকেতুটি পৃথিবীর খুব কাছাকাছি আসছে, সেটি আকারে বেশ বড় হবে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের।
বিভার বলেন, আমরা একটি চমৎকার বিস্ময়ের সাক্ষী হতে যাচ্ছি। ধূমকেতুটি প্রত্যাশার চেয়েও দ্বিগুণ উজ্জ্বল হতে পারে।
তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে ধূমকেতুটি উর্ট ক্লাউড থেকে এসেছে। উর্ট ক্লাউড হলো সৌরজগতের চারপাশে একটি তাত্ত্বিক বিশাল গোলক যেটিকে রহস্যময় বরফের বস্তুর আবাসস্থল বলা হয়।
বিভার জানান, ধূমকেতুটি নিজের জীবনের অধিকাংশ সময় পৃথিবী থেকে সূর্যের চেয়েও অন্তত আড়াই হাজার গুণ বেশি দূরত্বে কাটিয়েছে। উচ্চ প্যালিওলিথিক সময়কালে যখন পৃথিবীতে নিয়ান্ডারথালদের বিচরণ ছিল, তখন শেষবার ধূমকেতুটি পৃথিবী অতিক্রম করেছিল। তবে পৃথিবী এবং সূর্যকে অতিক্রমের পর ধূমকেতুটি সৌরজগত থেকে বের হয়ে যেতে পারে।
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপের মাধ্যমে ধূমকেতুটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হবে। তবে এটিতে ধূমকেতুর ছবি নেওয়া হবে না। ধূমকেতুটি পৃথিবীর যত কাছে আসবে, টেলিস্কোপের জন্য তার গঠন পরিমাপ করা তত সহজ হবে।
ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির পদার্থবিদ্যার অধ্যাপক থমাস প্রিন্স বলেন, ‘ধূমকেতুটি পৃথিবীর কাছে আসার দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে এটির গঠন জানা সহজ হবে। এ ছাড়া এটি আমাদের সৌরজগৎ ও এর বাইরের গ্রহ সম্পর্কেও তথ্য দিতে পারে।’
আরএ/