ভারতীয় কংগ্রেস দলের ১৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’র ১৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করা হলো।
১৮৮৫ সালের এই দিনে ব্রিটিশদের তুমুল শাসন, নির্যাতন ও নিগ্রহের মধ্যে কংগ্রেস নামের সর্বভারতীয় দলটির শুরু হয়েছে।
কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতার গল্প, দলটির প্রতিষ্ঠা তার জীবনকাহিনীর মতো পরতে, পরতে উত্তেজনায় ঠাসা। ব্রিটিশ রাজের ইন্ডিয়াতে নামকরা পাখিবিদ, উদ্ভিদবিদ, সরকারি চাকরিজীবি ছিলেন অ্যালান অক্টাভিও হিউম। তিনি একজন রাজনৈতিক সংস্কারক ছিলেন। ১৮৮৩ সালে হিউম তার এই আলোচনার ভিত্তিতে এবং নিজের ভাবনাপ্রসূত চিন্তামালাকে একটি উন্মুক্ত পত্রাকারে প্রেরণ করেছিলেন পশ্চিবঙ্গ ও এই অঞ্চলের একমাত্র উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ পাস ছাত্র, ছাত্রীদের উদ্দেশ্য, তাদের শিক্ষকমণ্ডলীকে ঘিরে।
সেখানে তিনি ভারতবাসীকে শিক্ষাদান এবং ভারতবাসী ও ব্রিটিশ রাজ্যের মধ্যে অলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তারপর তিনি আরও উদ্যোগী হলেন এবং ১৮৮৫ সালের ডিসেম্বরে অনেক উত্তেজনার পর তাদের তখনকার দ্য ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটের মধ্যে আলোচনা হলো বম্বেতে।
এই আলোচনার অনুমতি দিয়েছিলেন তখনকার ভাইসরয় লর্ড ডাফিন। ২৮ থেকে ৩১ ডিসেম্বরের এই আলোচনা থেকেই জন্ম দিল ‘ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস’ নামের রাজনৈতিক দলটি। ভারতের তখনকার ৭২টি প্রদেশের প্রতিটি থেকে একজন করে প্রাদেশিক প্রতিনিধি এসেছেন।
প্রথম প্রেসিডেন্ট বা সভাপতি হয়েছেন বাঙালি উমাপ্রসাদ ব্যানার্জি। তবে তাদের সামান্য উচ্চশ্রেণি ভারতবর্ষের তৃণমূল দরিদ্র মানুষদের উপস্থাপন করতে পারেনি। উচ্চকাঙ্ক্ষী উচ্চ ও অভিজাত শ্রেণার রাজনৈতিক দল হিসেবে যাত্রা করেছে কংগ্রেস। বদলে গিয়েছে মহাত্মা গান্ধীর হাতে। এখন অনেক ঘা খেয়ে ও সামলে পুরো ভারতজুড়েই জালের মতো ছড়িয়ে আছে সর্বপ্রাচীন দলটি।
ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস পরিচালিত হয় ‘অল ইন্ডিয়ান কংগ্রেস কমিটি’র মাধ্যমে (এআইসিসি), তাদের মধ্যমণি জওহরলাল নেহেরুর উত্তরাধিকার, যেহেতু মহাত্মা গান্ধী বিয়েই করেননি। তিনি ভারতকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন।
কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের সবাইকে ১৩৮তম প্রতিষ্ঠাবাষিকীতে নবনির্বাচিত সভাপতি মল্লিকার্জুন খোড়গে নয়াদিল্লীর সদর দপ্তরে কংগ্রেসের সাবেক সভাপতি এবং গান্ধী পরিবারের পুত্রবধু সোনিয়া গান্ধী এবং তার ছেলে কংগ্রেসের এমপি, ‘ভারত জোড় যাত্রা’র প্রাণপুরুষ রাহুল গান্ধীর উপস্থিতিতে প্রধান নেতা-কর্মীদের নিয়ে দলীয় পতাকা উত্তোলন করেছেন।
বুধবার প্রতিষ্ঠাবাষিকীতে কংগ্রেসের নতুন বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়া এবং কর্মহীনতায় আক্রান্ত হয়েছেন এই দেশের জনগণ। তবে সরকার কোনো ভ্রুক্ষেপ করেনি।’
কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খোড়গে সরকারকে আরো আক্রমণ করেছেন, ‘ভারতের মূল ভিত্তিগুলো ধারাবাহিকভাবে আক্রান্ত হয়েছে।
আমাদের সমাজ ঘৃণার মাধ্যমে বিভাজিত হয়ে গিয়েছে। জনগণ দ্রব্যমূল্যের দাম বেডে যাওয়াতে আক্রান্ত হয়েছেন এবং তারা কর্মহীনতায় নাজুক অবস্থায় পড়েছেন। তবে সরকার মাথা ঘামায়নি।’
তিনি বলেছেন, ‘ভারতের উন্নয়নগুলো সাধিত হয়েছে কংগ্রেসের উপযুক্ত নীতিতে, সেখানে অন্তর্ভুক্তি ও সবাইকে আলাদাভাবে গ্রহণের পন্থাগুলো অবলম্বন করা হয়েছে।’
মল্লিকার্জুন খোড়গে বলেছেন, ‘ভারত কেবল একটি শক্তিশালী ও সফল রাষ্ট্র হিসেবেই প্রকাশিত হয়নি, কয়েক দশকে আমরা অর্থনৈতিক, পরমাণু এবং কৌশলগত ক্ষেত্রগুলোতে সুপার পাওয়া হয়ে উঠেছি।’
খোগড়ে বলেছেন, ‘বিশ্বে কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসা, তথ্য প্রযুক্তি ও চাকরিজীবি খাতে সবচেয়ে ওপরের দেশগুলোর একটি আমাদের ভারত। নিজের মাধ্যমে এই অর্জনগুলো সাধন করতে পারেনি আমাদের দেশ। কংগ্রেসের গণতন্ত্রে বিশ্বাস, আমাদের অন্তর্ভুক্তিমূলক মতবাদ, যেখানে সবাইকে সঙ্গে নেওয়া, সংবিধানের ওপর আমাদের পূর্ণ বিশ্বাস ও আস্থা (কংগ্রেসেরই তৈরি), যেখানে প্রত্যেকেকে সমঅধিকার প্রদান ও সুযোগগুলো নির্মাণ, সবার জন্য সুযোগের বিকাশ সাধনের কথা বলা আছে এবং এই সংগ্রামে কংগ্রেসের পূর্ণ অংশগ্রহণ সবসময় রয়েছে।’
ওএফএস/