পেরুর সাবেক রাষ্ট্রপতির ১৮ মাসের কারাদন্ড, দাঙ্গায় নিহত ২০
পেরুর ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট পেদ্রো কাস্তিওকে প্রি-ট্রায়াল ডিটেনশন বা তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের শুনানীর আগে ১৮ মাসের জন্য কারাদন্ডের নির্দেশ দিয়েছেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) কাস্তিও'র বিরুদ্ধে এই রায় দেন আদালত।
এদিকে এই ঘটনায় তার সমর্থকেরা কোর্ট ভবনের বাইরে ও সারা দেশে ব্যাপক প্রতিরোধ গড়ে তুলে। তাদের প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মধ্যে অন্তত ২০ জন মানুষ মারা গিয়েছেন। এবং প্রায় ৪০০ জনের আহত হওয়ার খবর এসেছে। বৃহস্পতিবার অ্যাম্বুলেন্স অফিস থেকে এমন তথ্যই উঠে এসেছে।
সাবেক বিদ্যালয় শিক্ষক ও শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা কাস্তিও উঠে এসেছেন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে, গেল সপ্তাহে তাকে তার কার্যালয় থেকে অভিশংসন করা হয়েছে। এর কারণ, তিনি দেশের পার্লামেন্ট কংগ্রেসকে ভেঙে দিয়ে একটি জরুরী সরকার তৈরির জন্য চেষ্টা করেছেন। এরপর কৌশলী হয়ে পার্লামেন্ট সদস্যরা তাকে অভিশংসন করছেন।
তারপর থেকেই তিনি বিদ্রোহ ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগে বন্দী ছিলেন। তবে সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধান।
কাস্তিও'র বিরোধী আইনজীবিরা বলেছেন যে সাবেক প্রেসিডেন্ট তার নিরাপত্তার জন্য বিদেশে পালিয়ে যেতে পারেন এবং তারা জানিয়েছেন, কাস্তিও'র বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে ১৮ মাস লাগবে। এরপর সুপ্রিম কোর্টের বিচারক হুয়ান কার্লোস চেকলি বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদের কারাবাস এই প্রতিবিম্বকে তুলে ধরে যে মামলাটি জটিল ও তার বিদেশে পালানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কাস্তিওর আইনজীবিরা বলেছেন, সাবেক প্রধান নেতার পালানোর কোনো সম্ভাবনা নেই।
আদালতে কাস্তিও নিজে কোনো কথা বলেননি। এর আগে আরেকটি শুনানিতে তিনি তার কাজগুলোর পক্ষে বলেছেন, ‘আমি কোনোদিনও যড়যন্ত্র বা বিদ্রোহের মতো কোনো অপরাধ করিনি’ এবং তিনি উল্লেখ করছেন নিজেকে এখনো তিনি ‘প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে বিবেচনা করেননি।
তিনি আরও বলেছেন, ‘আমি কোনোদিনও পদত্যাগ করব না এবং জনপ্রিয়তার দিক থেকে নিজেকে এতিম মনে করব না।’
তাকে তার কার্যালয় থেকে সরানোর দিন থেকে কাস্তিও’র সমর্থকরা আন্দেজের এই দেশের শহরগুলোর রাস্তাগুলোতে চলে এসেছেন এবং তার কিছু সমর্থক বলছেন, দেশ এখন জরুরী অবস্থায় রয়েছে।
একজন প্রতিবাদকারী রাজধানী লিমায় বলেছেন, ‘কাস্তিওকে অপহরণ করা হয়েছে। আমরা অত্যাচারিত হয়েছি।’
আরেকজন প্রতিবাদকারী আদালতের ব্যবস্থাকে দুর্নীতির ব্যবস্থা বলেছেন ও তাদের নেতাকে কারাদন্ডের মাধ্যমে অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।
মাচু পিচ্চু শহরের মেয়র সিএনএনকে জানিয়েছেন, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের কবলে পড়ে পেরুর রেলওয়ে মাচু পিচ্চু অঞ্চলে ট্রেন চালানো স্থগিত করার পর সেখানে অন্তত শখানেক মানুষ অসহায় অবস্থায় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তারা সরকারকে সাহায্য করতে অনুরোধ করেছেন ও বিপদে পড়া এই পর্যটকদের সাহায্য করতে হেলিকপ্টার দেওয়ার জন্য বলেছেন যেহেতু এই শহর থেকে বেরুনোর একমাত্র উপায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
পেরুর বর্তমান সরকার সাবেক প্রেসিডেন্টের সমর্থকদের লাঠিচার্জের মাধ্যমে দমন করছে। প্রেসিডেন্ট দিনা বলোয়ার্তে আগাম নিবাচন দেবার কথা বলেছেন। তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুইস আলবের্তো ওর্তারোলা কিছুক্ষণ পর দেশে জরুরী অবস্থার ঘোষণা করেছেন ও রাস্তায়, রাস্তায় সরকারী আইনী বাহিনীকে নামিয়ে দিয়েছেন।
প্রতিরোধকারীরা একটি সাধারণ নির্বাচনেরও দাবী করছেন। কংগ্রেসকে বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন এবং একটি নতুন সংসদ তৈরি করতে বলছেন। তাদের দাবী-দাওয়ার সঙ্গে অঞ্চলটির কিছু বামপন্থী নেতা সংযুক্ত হয়েছেন। সোমবার একটি যুক্ত বিবৃতিতে কলম্বিয়া, মেক্সিকো, আর্জেন্টিনা ও বলিভিয়ার সরকার চরম পরিণতিতে উদ্বিঘ্নতা প্রকাশ করেছেন। তারা দাবী করেছেন তিনি গত বছর নির্বাচিত হবার পর থেকে অগণতান্ত্রিক হয়রানির শিকার হয়ে চলেছেন। তারা গত বছরের পেরুর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ভোটের ফলাফল সম্মান করার অনুরোধ করছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনা ফেলিলিয়া ইয়েরবাসি তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার অন্যান্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূতদের বৃহস্পতিবার দেশের ব্যক্তিগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার জন্য তলব করেছে পেরু।
কাস্তিও এর আগে কোনোদিন কোনো সরকারী মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব লাভ করেননি। তিনি সম্পদের পুর্ণবন্টন ও দেশের সবচেয়ে গরীব মানুষের ভাগ্য বদল করবেন-এই প্রতিশ্রুতির পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন।
তবে তার সরকার বিশৃঙ্খলার পাঁকে আটকে গিয়েছিল। এক বছরের সামান্য বেশি সময়ের মধ্যে এক ডজনেরও বেশি মন্ত্রীকে তিনি নিয়োগ দিয়েছেন, সেখানে আবার নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করেছেন। তারা হয় পদচ্যুত হয়েছেন নয়তো সরে গিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট নিজে দুর্নীতির অভিযোগে কয়েকটি অনুসন্ধানের মোকাবেলা করেছেন। তার বিপক্ষে দুবার অভিশংসনের ব্যর্থ হয়েছে। এবার তিনি পদচ্যুত ও কারাদন্ডে দন্ডিত হয়েছেন।
ওএফএস/এএস