শান্তিনিকেতনে পৌষ মেলার সিদ্ধান্ত বিশ্বভারতীর
পৌষ মাস শান্তিনিকেতন তথা বিশ্বভারতীর কাছে বরাবরই একটা তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এই পৌষ মাসেই ঠাকুর পরিবারের তরফে, আরও ভালোভাবে বললে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের দাদার উদ্যোগে শুরু হয়েছিল পৌষ মেলা। আর স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সেই মেলাকে সার্বজনীন করে তুলেছিলেন। এমনকি এই সময়টাকেই গুরুদেব বেছে নিয়েছিলেন বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানের জন্য।
এই মেলাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ তো বটেই, চীন, জাপানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকেও ছাত্র-ছাত্রী, সাবেক ছাত্র-ছাত্রী এবং পর্যটকরা শান্তিনিকেতন আসতেন। করোনার আগে পর্যন্ত এই মেলায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি। করোনার কিছু আগে দিল্লি থেকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ঘনিষ্ঠ এক অধ্যাপককে বিশ্বভারতীর মাথায় বসিয়ে দেওয়ার পর থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই মেলার ওপর আঘাত আসতে শুরু করে। কখনো পরিবেশ, কখনো আইনশৃঙ্খলা এমন নানা কারণ দেখিয়ে বিশ্বভারতীর নতুন কর্তৃপক্ষ, যা কিনা দিল্লির মোদী সরকারের আশীর্বাদধন্য, বারবার চেষ্টা করে এসেছে যাতে এই মেলা বন্ধ করে দেওয়া যায়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি যায় কলকাতা হাইকোর্টে।
দুই বাংলার বাঙালির শান্তিনিকেতন তথা রবীন্দ্র-আবেগ এবং বিশ্বভারতীর কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই দড়ি টানাটানিতে শেষ পর্যন্ত আদালত বিষয়টি থেকে একরকম সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আদালত মঙ্গলবার (৬ নভেম্বর) জানিয়েছে, পৌষ মেলার ব্যাপারে যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের। পৌষমেলার জন্য মাঠ ব্যবহার করা যাবে কি না, সিদ্ধান্ত বিশ্বভারতীরই— বললেন কলকাতা হাইকোর্ট।
উচ্চ আদালত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে আরও এক বার মেলার বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করতে বলেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন বলে নির্দেশ আদালতের। অন্য দিকে, বিকল্প মাঠে মেলার কথা বলছে রাজ্য।
যদিও উচ্চ আদালত বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষকে আরও একবার মেলার বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করতে বলেছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তারাই নেবেন বলে নির্দেশ আদালতের। অন্যদিকে, রাজ্যের তরফে আদালতে জানানো হয়েছে, বিশ্বভারতী তাদের মাঠ ব্যবহারের অনুমতি না দিলে বিকল্প মাঠের ব্যবস্থা করা হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে শেষ বার শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লীর মাঠে ঐতিহ্যবাহী পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এর পর করোনা আবহে এক বছর বন্ধ ছিল পৌষমেলা। গত বছরও বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে মেলা করা নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়। শেষমেশ বাংলা সংস্কৃতি মঞ্চ ও বোলপুর ব্যবসায়ী সমিতির উদ্যোগে রাজ্য সরকারের সহযোগিতা নিয়ে বোলপুরের ডাকবাংলো মাঠে পৌষমেলা অনুষ্ঠিত হয়।
এবার পূর্বপল্লীর পৌষমেলার মাঠেই মেলা করার আবেদন জানিয়ে বোলপুর পৌরসভাকে চিঠি দেয় শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। যদিও তা নিয়ে জটিলতা চলছে। অন্যদিকে, কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে পৌষ মেলা করার দাবি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তীকে ঘিরে বিক্ষোভ হয়।
আরএ/