খাদ্যশস্য রপ্তানিতে রাশিয়া-ইউক্রেন-তুরস্ক চুক্তি
দীর্ঘ পাঁচ মাস পর যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন থেকে বিভিন্ন দেশের খাদ্যশস্য আমদানির পথ খুলছে। ইউক্রেন যাতে খাদ্যশস্য রপ্তানি করতে পারে এ লক্ষ্যে শুক্রবার (২২ জুলাই) জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় রাশিয়া, তুরস্ক ও ইউক্রেনের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।
তুরস্কের দীর্ঘ দুই মাসের কূটনৈতিক তৎপরতার পর ইস্তাম্বুলে বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তিটি সই হয় বলে জানায় বিবিসি। চুক্তির ফলে কৃষ্ণসাগর অঞ্চলে অবরুদ্ধ ইউক্রেনের বন্দর হয়ে শস্য রপ্তানি পুনরায় শুরু হবে। যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনে প্রায় আড়াই কোটি টন খাদ্যশস্য মজুত রয়েছে।
এদিকে খাদ্য সংকটের সম্মুখীন বিশ্বের জন্য দারুণ সুখবর নিয়ে এসেছে এ চুক্তি। এ চুক্তির খবরে শুক্রবার আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম ৩ শতাংশ কমে গেছে।
চুক্রির সুফল পাবে বাংলাদেশেও। কেননা বাংলাদেশ মোট গমের ২৫ শতাংশ ইউক্রেন থেকে আমদানি করে থাকে।
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান, রাশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা ইস্তাম্বুলে চুক্তি সই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
জাতিসংঘের মহাসচিব এই চুক্তিকে ‘আশার বাতিঘর’ এবং ‘বিশ্বের জন্য চুক্তি’ বলে অভিহিত করেছেন। এরদোয়ান বলেছেন, এর ফলে বিশ্বে খাদ্য সংকটের অবসান হবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেনকে এই চুক্তিতে আনতে সর্বাত্মক প্রচেষ্টার জন্য তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে কৃতজ্ঞতা জানান জাতিসংঘ মহাসচিব। পাশাপাশি, যুদ্ধকে একপাশে সরিয়ে আন্তর্জাতিক খাদ্য সরবরাহকে সচল রাখতে রাশিয়া ও ইউক্রেনের এগিয়ে আসাকেও স্বাগত জানিয়েছেন তিনি।
চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, ইউক্রেনে আটকে থাকা শস্য বহনকারী বিভিন্ন বাণিজ্যিক জাহাজ যেন নিরাপদে কৃষ্ণসাগরে চলাচল করতে পারে, সেজন্য তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারায় একটি যৌথ সমন্বয় কেন্দ্র খোলা হবে। সেই কেন্দ্র পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে জাতিসংঘ, রাশিয়া ও তুরস্ক। চুক্তির মেয়াদ ১২০ দিন বা চার মাস। উভয় পক্ষ সম্মত হলে মেয়াদ নবায়ন করা যেতে পারে। চুক্তির আওতায় কৃষ্ণসাগরের মাধ্যমে রাশিয়ান খাদ্যশস্য ও সারও রপ্তানি সহজতর হবে।
রাশিয়া ও ইউক্রেন দুই দেশই গুরুত্বপূর্ণ গম রপ্তানিকারক দেশ। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের কারণে বিশ্বের খাদ্যের মূল্য ব্যাপকভাবে বেড়েছে। রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়। এর ফলে ইউক্রেন থেকে কৃষ্ণসাগর হয়ে শস্য রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।
চুক্তি অনুযায়ী, খাদ্যশস্যবাহী ইউক্রেনীয় জাহাজ চলাচলের সম্মত হয় রাশিয়া। এই সুযোগ ইউক্রেন যাতে অস্ত্র না নেয় তা নজরদারি করবে তুরস্ক। এর ফলে পাঁচ মাস পর প্রথম কৃষ্ণসাগর বন্দর থেকে রপ্তানি করার সুযোগ পাচ্ছে ইউক্রেন। তবে পাঁচ মাস যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণসাগরের পানিতে মাইন নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। এ ছাড়া রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে অবিশ্বাসও চরমে পৌঁছেছে। কিয়েভ বলেছে, তারা সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে কোনো চুক্তি করেনি। তাদের চুক্তি হয়েছে তুরস্ক ও জাতিসংঘের সঙ্গে।
আরএ/