সর্বস্ব হারিয়ে পাকিস্তানেই ফিরছেন ভারতের নাগরিক হতে চাওয়া হিন্দুরা
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহসহ দেশটির কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিসেবে নির্যাতিতদের পুনর্বাসনের। সেই কথা বিশ্বাস করার ভয়ানক মূল্য দিতে হচ্ছে পাকিস্তানের হাজার খানেক ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে। তারা বেশিরভাগই হিন্দু, কয়েকটি শিখ পরিবারও আছে। ওই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা পাকিস্তানেই ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
পাকিস্তানে নির্যাতিত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের পাশে দাঁড়ানো সংগঠন ‘সীমান্ত লোক সংস্থান’ সম্প্রতি নাগরিকত্বের সন্ধানে ভারতে আসা পাকিস্তানের হিন্দুদের হেনস্থা ও দুর্দশার বিষয় প্রকাশ্যে এনেছে।
ধর্মের কারণে পাকিস্তানে পদে পদে নির্যাতিত হওয়া ওই সংখ্যালঘুরা ভারতের নাগরিক হতে চেয়ে ভিসা করিয়ে ভারতে গিয়েছিলেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, প্রতিশ্রুতির বন্যা ছাড়া বিজেপি সরকারের কাছ থেকে কিছুই জোটেনি তাদের। ভাঙা মন নিয়ে প্রায় ৮০০ জন পাকিস্তানে ফিরে গেছেন, যাদের তুলে ধরে পাকিস্তানের প্রশাসন এখন বাকিদের দেখাচ্ছে–ভারতে গিয়ে কী হেনস্থার মধ্যে পড়েছিলেন তারা।
‘সীমান্ত লোক সংস্থান’ জানায়, যে হাজার খানেক মানুষ বিভিন্ন ধরনের ভিসা করিয়ে ভারতে এসেছিলেন তারা সবাই খুবই দরিদ্র। বস্তুত শেষ সম্বলটুকু নিয়েই তারা ভারতে আসেন। বারবার প্রশাসনের কাছে দরবার করে, দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেও কোনো পথ খুঁজে পাননি তারা।
সীমান্ত লোক সংস্থানের সভাপতি হিন্দু সিংহ সোঢা বলেন, ‘স্বল্প মেয়াদের ভিসায় ভারতে এসে চরম দুর্দশার মধ্যে দিন কাটিয়ে অপেক্ষা করতে করতে প্রায় সবারই ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদও শেষ। এই পরিস্থিতিতে তারা দিল্লির পাকিস্তান দূতাবাসে ধরনা দিচ্ছেন, তারাও সুযোগ বুঝে গরিব মানুষগুলোকে সর্বস্বান্ত করছে। তার পরও অন্তত ৮০০ মানুষ মাথা নিচু করে সেই পাকিস্তানেই ফিরে গেছেন। তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, একেকটি পরিবারের কাগজপত্র ঠিক করে দেওয়ার জন্য লাখ টাকা করেও আদায় করেছেন পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মীরা। পাকিস্তানে ফিরে যাওয়ার পর এবার সেখানে তাদের দিয়ে বলানো হচ্ছে, নাগরিকত্ব চাইতে গিয়ে ভারতে কী হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাদের। সুযোগ বুঝে তাদের সামনে এনে ভারতবিরোধী প্রচার করছে পাকিস্তান।
সোঢা জানান, ভারতে না খেয়ে থাকার চেয়ে পাকিস্তানে ফিরে যাওয়াই শ্রেয় বলে মনে করছেন পাকিস্তানের ওই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। হাজারের মধ্যে ৮০০ জনই ফিরে গেছেন। বাকিরা তোড়জোড় করছেন।
প্রসঙ্গত, অনেকেই ভেবেছিলেন নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের (সিএএ) সুযোগ তারা পাবেন; কিন্তু ২০১৯ সালে সরকার তাড়াহুড়ো করে সংসদে সেই আইন পাস করালেও এখনো তা বাস্তবায়ন করেনি। আবার এই আইনে যেসব শর্ত ও নথি জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে, তা পূরণ করাটা দরিদ্র ওই সংখ্যালঘুদের জন্য বেশ কষ্টকর হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আনন্দবাজার পত্রিকা/এসএ/