রাশিয়ার উপর জি-৭ জোটের নতুন নিষেধাজ্ঞা
রাশিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সাত শিল্পোন্নত দেশের জোট জি-৭। জোটের নেতারা বলেছেন, তারা রাশিয়ার জ্বালানি তেলের উপর নির্ভরশীলতা ধাপে ধাপে কমিয়ে আনবেন।
ইউক্রেনে চলমান সংঘাতের মধ্যে রবিবার (৮ মে) ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত এক সভায় এ ব্যাপারে একমত হন তারা। এদিকে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে রুশ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম, ব্যাংকের নির্বাহী ও অন্য কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের উপর একক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।
জি-৭ (গ্রুপ অব সেভেন) হচ্ছে জাপান, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র এই সাত দেশ নিয়ে গঠিত একটি সংগঠন। এ সাতটি দেশ হচ্ছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল স্বীকৃত বিশ্বের সাতটি মূল উন্নত অর্থনীতির দেশ।
এদিন সংগঠনের বর্তমান চেয়ারম্যান জার্মানির উদ্যোগে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এক জরুরি বৈঠক যোগ দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ জি-৭ সদস্য দেশগুলোর নেতারা। ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতি আলোচনায় বৈঠকে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকেও।
বৈঠকের পর এক একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করে জি-৭। এতে বলা হয়, আমরা রুশ জ্বালানির উপর নির্ভরশীলতা থেকে ধাপে ধাপে বেরিয়ে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি। সেই লক্ষ্যে আমরা আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করব।’
এদিকে রাশিয়ার তিন টেলিভিশন স্টেশনের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সেই সঙ্গে প্রায় ২ হাজার ৬০০ রুশ ও বেলারুশীয় কর্মকর্তার উপর ভিসা কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এ ছাড়া রাশিয়ার গুরুত্বপর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের একাধিক নির্বাহী কর্মকর্তার উপর নিষেোজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
এদিকে যুদ্ধ পরিস্থিতির ভেতরেই ইউক্রেন সফর করছেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। রবিবার (০৮ মে) এক অঘোষিত সফরে রাজধানী কিয়েভে পৌঁছান তিনি। এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠককালে ইউক্রেনকে নতুন করে আরও অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দেন তিনি।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো। শুধু তাই নয়, চলমান এ সংঘাতের মধ্যে একের পর এক পশ্চিমা নেতা কিয়েভ সফর করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের ১০ম সপ্তাহে কিয়েভ সফর করছেন ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য কানাডার প্রধানমন্ত্রী ট্রুডো।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এদিন রাজধানী কিয়েভ পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন ট্রুডো। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে ইউক্রেনকে আরও অস্ত্র সরবরাহের ঘোষণা দেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আজ আমি আরও সামরিক সহযোগিতার ঘোষণা করছি। ইউক্রেনকে আরও ড্রোন ক্যামেরা, স্যাটেলাইট ইমেজারি, ছোট্ট অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ অন্যান্য সহযোগিতা দেওয়া হবে।’
ইউক্রেন সংঘাত শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনকে ইতোমধ্যে ১১ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সামরিক সরঞ্জাম দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে কানাডা সরকার।
ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালানোয় কানাডা রাশিয়ার উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলেও জানান ট্রুডো। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার প্রতিরক্ষা খাত ও সরকারের সঙ্গে সংশ্লিষ ৪০ ব্যক্তি ও ৫ প্রতিষ্ঠানের উপর নিষেধাজ্ঞা আনছি আমরা।’
এরপর রাজধানী কিয়েভের নিকটবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরপিন শহর পরিদর্শন করেন ট্রুডো। অভিযানের এক মাস পর গত মার্চে রুশ সেনা প্রত্যাহারের আগে শহরটিতে রুশ ও ইউক্রেনীয় বাহিনীর মধ্যে তুমুল লড়াই হয়।
পরিদর্শনকালে ট্রুডোকে স্বাগত জানান ইরপিনের মেয়র অলেক্সান্ডার মার্কুশিন। এরপর এক টুইটার বার্তায় তিনি বলেন, ‘আমাদের শহরে রুশ দখলদাররা যে নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ সাধন করেছে তা স্বচক্ষে দেখতে এসেছেন ট্রুডো।’
এদিকে পূর্ব-ইউক্রেন দোনবাসের দোনেৎস্ক ও লুহানস্কে ইউক্রেন এবং রাশিয়ার বাহিনীর মধ্যে সহিংস লড়াই অব্যাহত রয়েছে। রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন একটি স্কুলে রাশিয়া হামলা চালিয়েছে। এতে অন্তত ৬০ বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৭৪ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৭৫তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখন পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/