রাশিয়ার গ্যাস যাবে না পোল্যান্ডে
পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ করবে না রাশিয়া। বুধবার (২৭ এপ্রিল) সকাল থেকে এ নির্দেশ কার্যকর হবে। রুশ সরকারের ঘোষিত নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রুশ মুদ্রা রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধে অস্বীকৃতি জানায় ওয়ারসর কর্মকর্তারা। এর পরই পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের ঘোষণা দেয় রাশিয়া। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
পোল্যান্তের রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি পিজিনিগের বরাতে স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওনেট জানিয়েছে, রাশিয়া সরকার ইয়ামাল পাইপলাইন চুক্তির অধীনে পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ নিয়ে পোলিশ সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এক জরুরি বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকে অংশগ্রহণকারীরা রাশিয়ার পদক্ষেপকে ‘হঠকারিতামূলক’ অভিহিত করে বলেছেন, গ্যাস সরবরাহ বন্ধের কোনো কারণ মস্কোর পক্ষ থেকে জানানো হয়নি।
এর আগে মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) দুপুরে পোল্যান্ড সরকারের কৌশলগত জ্বালানি অবকাঠামো বিষয়ক কমিশনার পিতর নাইমস্কি ওয়ারসতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা কোনোভাবেই রুবলে গ্যাসের মূল্য পরিশোধ করব না, এটা স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিচ্ছি। ইয়ামাল পাইপলাইন রাশিয়া থেকে বেলারুশ হয়ে পোল্যান্ড এবং জার্মানিতে প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহন করে। পোল্যান্ড বছরে প্রায় ৯ বিলিয়ন ঘনমিটার রাশিয়ান গ্যাস পায়, যা দেশের চাহিদার প্রায় ৪৫ শতাংশ পূরণ করে।
পোলিশ গ্যাস কোম্পানি বলেছে, তারা রাশিয়ার অর্থপ্রদানের অনুরোধের বিষয়ে আইনি পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করছে। কিন্তু পোল্যান্ডের জলবায়ু মন্ত্রী আনা মোসকওয়া জোর দিয়ে বলেছেন, রাশিয়ান শক্তির উৎসের ওপর নির্ভরতা কমাতে কয়েক বছর কাজ করার পরে পোল্যান্ড এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিল। এদিকে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার এমন পদক্ষেপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পোল্যান্ডে রাশিয়ার গ্যাস সরররাহ বন্ধের খবর প্রকাশের পরপর ইউরোপের বাজারে গ্যাসের দামে ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে। লন্ডন আইস এক্সচেঞ্জের তথ্যমতে, মঙ্গলবার দুপুরের তুলনায় গ্যাসের দাম ১২ শতাংশ বেড়ে প্রতি হাজার ঘনমিটার ১ হাজার ১৫০ ডলারে উন্নীত হয়েছে। স্টকব্রোকাররা জানিয়েছেন, প্রতি ঘণ্টায় গ্যাসের দাম বাড়ছে।
রুশ সংবাদমাধ্যম তাস জানিয়েছে, রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি গ্যাজপ্রম পোল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ বন্ধের খবর নিশ্চিত করেনি তবে কোম্পানির একজন প্রতিনিধি এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে বলেছেন, নতুন প্রবর্তিত নিয়ম অনুযায়ী পোল্যান্ডকে আজকের মধ্যে গ্যাসের মূল্য রুবলে পরিশোধ করতে হবে। শুক্রবার রাশিয়ার পক্ষ হতে দেওয়া এক বার্তায় পোল্যান্ডকে নতুন নিয়মে গ্যাসের মূল্য পরিশোধের জন্য মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল বলে তিনি জানান। গ্যাজপ্রম পোলিশ কোম্পানির ৪৮ শতাংশ শেয়ারের মালিক। পাশাপাশি ইয়ামাল-ইউরোপ গ্যাস পাইপলাইনের সহ-মালিকও তারা।
এর আগে পোল্যান্ড সরকার রাশিয়ার ৫০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্তদের মধ্যে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত গ্যাস কোম্পানি গ্যাজপ্রমের নাম রয়েছে। এছাড়া পোল্যান্ডের রাষ্ট্রায়ত্ত কেমিক্যাল কোম্পানি আজতির আংশিক শেয়ারহোল্ডার, রুশ ধনকুবের মোশে কান্তরকেও নিষেধাজ্ঞায় রাখা হয়েছে।
পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মারিউস কামিনস্কি বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি পোল্যান্ড নতুন এ নিষেধাজ্ঞা জারি রাখবে। নিষেধাজ্ঞাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ জব্দ করা হবে এবং এসব প্রতিষ্ঠানকে সরকারি ক্রয়-বিক্রয় ও দরপত্রে অংশ নিতে দেওয়া হবে না। এছাড়া কালো তালিকাভুক্ত ধনকুবের ও ব্যবসায়ীরা পোল্যান্ডে প্রবেশ করতে পারবেন না।
রাশিয়ার সামরিক অভিযানের সময় পোল্যান্ড প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনকে জোরালোভাবে সমর্থন করেছিল। দেশটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলোর ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ করার একটি অন্যতম ট্রানজিট পয়েন্ট।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৬২ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৬৩তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখ পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/