সু চির দুর্নীতির মামলার রায় ঘোষণা স্থগিত
মিয়ানমারের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক দুর্নীতি মামলার মধ্যে একটির রায় ঘোষণা স্থগিত করেছেন মিয়ানমারের আদালত।
সু চির বিরুদ্ধে করা ৬ লাখ ডলার ও ১১ দশমিক ৪ কেজি স্বর্ণ ঘুষ গ্রহণের মামলার রায় আজ সোমবার (২৫ এপ্রিল) দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। দেশটির সামরিক সরকারের একজন মুখপাত্র এসব কথা জানিয়েছেন। এএফপির এক প্রতিবেদনে জানা যায়, এই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ১৫ বছরের সাজা হতে পারে সু চির।
সামরিক সরকারের মুখপাত্র জাও মিন তুন এএফপিকে বলেন, ‘আজ কোনো রায় হচ্ছে না।’ কবে নাগাদ রায় ঘোষণা হতে পারে, সে বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।
সামরিক বাহিনীর তৈরি রাজধানী নেপিদোতে একটি বিশেষ আদালতে মামলার শুনানিতে সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকতে দেওয়া হয়নি। গণমাধ্যমের সঙ্গে মামলার বিষয়ে সু চির আইনজীবীর কথা বলার ওপরও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
অজ্ঞাত স্থানে ৭৬ বছর বয়সী সু চিকে আটকে রাখা হয়েছে। তার সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেওয়া হয় না। নিজের বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন তিনি।
রয়টার্স জানিয়েছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হন সু চি। এর পর থেকে এই নোবেলজয়ীর বিরুদ্ধে বিক্ষোভে উসকানি ও দুর্নীতি থেকে শুরু করে নির্বাচনী, রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনসহ বেশ কিছু অভিযোগ আনা হয়েছে। এসব মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সম্মিলিতভাবে তার সর্বোচ্চ সাজার পরিমাণ ১৫০ বছর ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এখন পর্যন্ত অং সান সু চি দুটি তুলনামূলক ছোট অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন এবং তার ছয় বছরের সাজা হয়েছে। অন্য মামলাগুলোর রায় হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। এতে দেশটির স্বৈরতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেওয়া সু চির রাজনীতিতে ফেরার সুযোগ নেই বললেই চলে।
মামলার বিচারপ্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, ইয়াঙ্গুনের সাবেক চিফ মিনিস্টার ফিও মিন থেইনের কাছ থেকে ৬ লাখ ডলার ও ১১ দশমিক ৪ কেজি স্বর্ণ ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে সু চির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। একসময় ফিওকে সু চির উত্তরসূরি মনে করা হতো।
সু চির এ শিষ্য অক্টোবরে সাক্ষ্য দেন, সমর্থন পেতে তাকে এই অর্থ ও স্বর্ণ দিয়েছিলেন তিনি। তার এই সাক্ষ্য জাতীয় টেলিভিশনে আলাদাভাবে সম্প্রচার করে সেনা সরকার। তবে এই অভিযোগকে ‘হাস্যকর’ মন্তব্য করে নাকচ করে দেন সু চি।
সু চির বিচার-সম্পর্কিত তথ্যের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সেনা সরকার। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই বিচারকে প্রহসন আখ্যা দিয়েছে। তবে সেনা সরকারের দাবি, যথাযথ নিয়ম মেনেই একটি স্বাধীন আদালতে সু চির বিচার হচ্ছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সেনা অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, এরপর সামরিক বাহিনীর দমনপীড়নে ১ হাজার ৭০০ এর বেশি মানুষ নিহত হন। গ্রেপ্তার করা হয় ১০ হাজার মানুষকে।
টিটি/