যুদ্ধজাহাজডুবির ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা জানাল রাশিয়া
কৃষ্ণসাগর বহরের প্রধান যুদ্ধজাহাজ ছিল মস্কভা
রাশিয়ার নৌবাহিনীর কৃষ্ণসাগর বহরের প্রধান যুদ্ধজাহাজ মস্কভাডুবির ঘটনায় হতাহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে রাশিয়া। গত সপ্তাহে বিস্ফোরণের পর ক্রুজার মস্কভা ডুবে যায়।
ওই ঘটনায় একজন নাবিক নিহত হয়েছেন। নিখোঁজ হন আরও ২৭ নাবিক ও বাকি ৩৯৬ নাবিককে উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানায় রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
শুক্রবার (২২ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে প্রথমবারের মতো রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় স্বীকার করেছে, ওই সময় হতাহতের ঘটনা ঘটে।
এর আগে ১৪ এপ্রিল রাতে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, মস্কভা ক্রুজারে আগুন লেগেছে আর তাতে গোলাবারুদের বিস্ফোরণ ঘটেছে। সব নাবিককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। জাহাজটিতে থাকা ক্ষেপণাস্ত্রগুলো অক্ষত আছে।
তখন রাশিয়া জানিয়েছিল, গোলাবারুদের মজুদে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যাওয়ার পর মস্কভাকে বন্দরে টেনে নেওয়া হচ্ছিল। ওই সময় সাগর উত্তাল থাকায় ডুবে যায় মিসাইল ক্রুজারটি। তবে ইউক্রেনের দাবি, মস্কভায় তারা জাহাজবিধ্বংসী দুটি নেপচুন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছিল।
১২ হাজার ৪৯০ টনের মস্কভা হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ডুবে যাওয়া সবচেয়ে বড় যুদ্ধজাহাজ। সিরিয়ার যুদ্ধেও মিসাইল ক্রুজারটি মোতায়েন করেছিল রাশিয়া। মস্কভাকে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর শক্তির প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
রুশ সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মস্কভা ১৯৮৩ সালে কমিশন লাভ করে। এ যুদ্ধজাহাজ ৭০০ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানতে সক্ষম ১৬টি ভুলকান ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত ছিল। এ ছাড়া এতে ছিল সাবমেরিনবিধ্বংসী ও মাইন-টর্পেডো অস্ত্র।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৫৮ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৫৯তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখন পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/