ডনবাস দখলের পথে হামলা জোরদার করল রাশিয়া
রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন আগেই ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিয়েভ থেকে সরে এলেও ডনবাস অঞ্চল অর্থাৎ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান তিনি। এবার সে লক্ষ্যেই ডনবাস এলাকায় হামলা জোরদার করেছে রাশিয়া।
তীব্র লড়াইয়ের পর এখন ‘ডনবাসের জন্য যুদ্ধ’ চলছে বলে নিশ্চিত করেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই অঞ্চলের যুদ্ধে রাশিয়ার বিপুল সংখ্যক সেনা অংশ নিয়েছে বলেও জানান তিনি। রকেট ও আর্টিলারি দিয়ে ডনবাসের শহরগুলোর ওপর মস্কো বোমা হামলা করছে বলে একটি ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন জেলেনস্কি। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
জেলেনস্কি বলেন, ‘এখানে যতই রুশ সৈন্য আনা হোক না কেন, আমরা যুদ্ধ করব। আমরা নিজেদের রক্ষা করব।’ অন্যদিকে জেলেনস্কির চিফ অব স্টাফ বলেছেন, ডনবাসে রাশিয়ার হামলার মধ্য দিয়ে যুদ্ধের ‘দ্বিতীয় পর্ব’ শুরু হয়েছে।
এদিকে, ইউক্রেনের শতাধিক সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়েছে রাশিয়া। সোমবার (১৮ এপ্রিল) এ দাবি করে মস্কো জানায়, রুশ সেনাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ইউক্রেনের বেশ কয়েকটি সেনাঘাঁটি ধ্বংস হয়েছে।
এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী ইউক্রেনের ৩১৫টি লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে। এর মধ্যে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের গুদাম রয়েছে। একই সঙ্গে রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দুটি যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করেছে।
খারকিভ, ইরপিনসহ বিভিন্ন এলাকার ১৬টি সামরিক স্থাপনা ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে বলেও দাবি করেছে মস্কো। কৃষ্ণ সাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজ মস্কভায় ইউক্রেনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পাল্টা প্রতিশোধ হিসেবে হামলা জোরদার করে মস্কো। তারই অংশ হিসেবে এ অভিযান।
এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সদস্যপদ পেতে তোড়জোড় শুরু করেছে ইউক্রেন। ইইউর সদস্যপদের জন্য একটি প্রশ্নমালা পূরণ করে জমা দিয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ইউক্রেন ইইউর সদস্যপদ প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত হতে পারে বলেও জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৫৪ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৫৫তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখ পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/