মারিউপোলে আত্মসমর্পণ নয়, শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ঘোষণা ইউক্রেনের
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোল পুরোপুরি দখলে নিয়েছে রাশিয়া। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, বন্দরনগরী মারিউপোলের জন্য রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাবে তাদের যোদ্ধারা। জেলেনস্কি আগেই বলেছেন, মারিউপোলে ইউক্রেনের যোদ্ধাদের নিশ্চিহ্ন করার অর্থ হলো আলোচনার সমাপ্তি টেনে দেওয়া। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
জেলেনস্কির কথার প্রতিফলন দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী ডেনিস স্মিহালের বক্তব্যেও। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার আল্টিমেটাম সত্ত্বেও শহরটি এখনও রুশ সেনাদের দখলে যায়নি। সেনারা লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।’
এর আগে গত শনিবার (১৬ এপ্রিল) রুশ সেনাবাহিনী এক আল্টিমেটামে মারিউপোলে ইউক্রেনীয় বাহিনীকে রবিবার সকাল ৬টার মধ্যে আত্মসমর্পণ এবং দুপুর ১টার মধ্যে এলাকা খালি করার আহ্বান জানায়। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় আরও জানায়, মারিউপোল শহরটি এখন রুশ সেনাদের দখলে রয়েছে। শুধু শহরের দক্ষিণাঞ্চলের আজভস্তালে একটি ইস্পাত কারখানায় ইউক্রেনের সেনাদের একটি ছোট দল অবরুদ্ধ রয়েছে। তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এক বিবৃতিতে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মেজর জেনারেল ইগর কোনাশেঙ্কোভ বলেন, ‘ইতিমধ্যে ১ হাজার ৪৬৪ জন ইউক্রেনের সেনা আত্মসমর্পণ করেছেন। এখন ইউক্রেনের অবরুদ্ধ সেনারা যদি যুদ্ধ চালিয়ে যান, তবে তাদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। আর আত্মসমর্পণ করলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করবে রুশ বাহিনী।’
তবে ঘোষিত সময়ের পরও এখন পর্যন্ত আত্মসমর্পণ করেনি ইউক্রেনীয় সেনারা। রবিবার (১৭ এপ্রিল) এক সাক্ষাৎকারে ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী স্মিহাল বলেন, ‘ইউক্রেনের দক্ষিণের বন্দর শহর মারিউপোলে অবশিষ্ট ইউক্রেনীয় সেনারা এখনও লড়াই করছেন। মারিউপোলের এখনও পতন হয়নি। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, একখণ্ড জমিও ছাড়বে না ইউক্রেন। রুশ বাহিনীর বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরোধ গড়ে তুলবে সেনারা।’
রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের সেনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলছে বলে মন্তব্য করেছে দেশটির কর্মকর্তারা। এ ব্যাপারে মারিউপোলের মেয়রের এক উপদেষ্টা পেট্রো আন্দ্রিউশচেঙ্কো বলেন, ‘রাশিয়ার আত্মসমর্পণের প্রস্তাবের পরও আমাদের সেনারা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছে।’
এদিকে ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রোববার ধারাবাহিক হামলায় অন্তত পাঁচজন নিহত ও ১৩ জন আহত হয়েছেন। এক স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বরাতে এ খবর জানিয়েছে বিবিসি।
রুশ বাহিনী কিয়েভ ও এর আশপাশের বেশ কয়েকটি শহরে হামলা জোরদার করেছে। কৃষ্ণসাগরে রুশ যুদ্ধজাহাজ ডোবার পর থেকে হামলার মাত্রা বাড়িয়েছে রুশ বাহিনী।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৫৩ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৫৪তম দিন। কিয়েভ থেকে সরে এসে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে শক্তি বৃদ্ধি করেছে রাশিয়া। এখ পুরো ডনবাস অঞ্চল তারা দখলে নেওয়ার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে রুশ বাহিনীর অভিযান। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/