পাকিস্তানের নতুন সরকারের সামনে যত চ্যালেঞ্জ
পাকিস্তানের রাজনীতি উত্তাল সময় পার করছে। শনিবার (৯ এপ্রিল) দিনভর জাতীয় পরিষদে অধিবেশ চলার পর মধ্যরাতে অনাস্থা ভোটে ইতিমধ্যে বিদায় নিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এর মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতি আবারও নতুন মোড় নিল। ইমরান খানের সম্ভাব্য উত্তরসূরি যিনিই হোক না কেন, ২২ কোটি জনসংখ্যার দেশটিকে নেতৃত্ব দিতে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি পড়তে হবে নতুন সরকারকে।
যে বিষয়গুলো সামনে আসছে এর মধ্যে পাকিস্তানের দুর্বল অর্থনীতি, ক্রমবর্ধমান জঙ্গিবাদ এবং সাবেক মিত্রদের সঙ্গে নড়বড়ে সম্পর্ক নিয়ে কাজ করাটা পরবর্তী প্রশাসনের এজেন্ডার শীর্ষে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ নিয়ে ইনিস্টিউট অব হিস্টোরিক্যাল অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চের অধ্যাপক জাফর আহমেদ বলেন, ‘যে সরকারই আসুক না কেন, অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক সম্পর্কের স্তরে একাধিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।’
পাকিস্তানের রাজনীতিতে অস্থিরতা খুব শিগগিরই থামার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। সরকার পতনের কিছু দিন আগে থেকেই এর প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। দাম হারাচ্ছে পাকিস্তানি মুদ্রা রূপি। গত বৃহস্পতিবার (৭ এপ্রিল) ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানি রূপির দাম কমে নতুন রেকর্ড ছুঁয়েছে। এক ডলারের বিনিময়ে পাওয়া যাচ্ছে ১৮৮ রূপি। পাকিস্তানের ইতিহাসে কখনও রূপির দাম এতটা নামতে দেখা যায়নি। এর পেছনে ইমরান খানের সরকারকে একতরফা দায়ী করেছে বিরোধী দলগুলো।
শুধু মুদ্রার দরপতনই নয়, গত তিন বছর ধরে পাকিস্তানের অর্থনীতির চাকা অনেকটা মন্থর হয়ে পড়েছে। সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্যবসা ও শিল্প খাত বিচলিত। রুপির মূল্য হ্রাস, রিজার্ভ কমে যাওয়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিসহ রাজস্ব ঘাটতির ফলে দেশটির অর্থনীতি ইতিমধ্যে ভঙ্গুর।
ইসলামাবাদের গবেষণা সংস্থা পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অব ডেভলপমেন্ট ইকোনমিক্স (পিআইডিই) ভাইস-চ্যান্সেলর নাদিম উল হক বলেন, ‘আমাদের জন্য কোনও নির্দেশনা নেই। অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে ব্যাপক সংস্কার নীতি প্রয়োজন।’ তিনি আরও বলেন, ‘একটি ঝুলন্ত তলোয়ার যেকোনও সময় পাকিস্তানের ওপর পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
সশস্ত্র গোষ্ঠী তালেবান আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলে নেওয়ার পর পাকিস্তানে নতুন করে হামলার ঘটনা বেড়েছে। খায়বার পাখতুন খোয়াসহ আফগান সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে পাকিস্তান তালেবানের তৎপরতা চোখে পড়ার মতো। গত বছরের আগস্টের পর পাকিস্তানের মসজিদসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হামলার ঘটনায় কয়েকশ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। একাধিক হামলার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস। নিরাপত্তা বাহিনী অভিযান চালিয়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণে আনা যাচ্ছে জঙ্গিবাদ। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে পাকিস্তানভিত্তিক তালেবানও হামলা বাড়িয়েছে। চলতি রমজান মাসেও সরকারি বাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণের হুমকি দিয়ে রেখেছে সশস্ত্র গোষ্ঠীটি।
ইমরান খান তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানকে (টিটিপি) মূলধারায় ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিলেও সম্প্রতি এই গোষ্ঠীটির সঙ্গে কোনো আলোচনাই হয়নি সরকারের। এ অবস্থায় পরবর্তী সরকারের জন্য খুব একটা সহজে সমাধান হচ্ছে না মনে করছেন বিশেজ্ঞরা। রাজনৈতিক বিশ্লেষক রজিউল্লাহ কাকার বলেন, ‘নতুন সরকারের জন্য জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণ গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ।’
ইমরান খানের দাবি, পাকিস্তানের বিরোধীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র তার সরকারকে অপসারণ করেছে। ইমরানের সরকারের সময় পাকিস্তানকে রাশিয়ার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে উঠতে দেখে বিশ্ব। আর পুরনো মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্কে অবনতি চোখে পড়ারই মতো। পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে নতুন করে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে আসন্ন সরকারকে, এ বিষয়টা অনেকটা স্পষ্ট বলছে বিভিন্ন মহল।
এসএ/