শীর্ষ ধনীর তালিকায় নতুন মুখ ২৩৬
দুই বছর ধরে চলমান করোনা মহামারি ও সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মধ্যেই শীর্ষ ধনীর তালিকায় যুক্ত হয়েছেন আরও ২৩৬ জন। এ বছরের তালিকায় দেখা যাচ্ছে, গত বছরের চেয়ে সম্পদ বেড়েছে ১ হাজার শীর্ষ ধনীর। আর বিশ্বের কয়েকটি দেশ থেকে এ বছরই প্রথম কয়েকজন ধনী এই তালিকায় স্থান পেয়েছেন। দেশগুলো হলো-বার্বাডোজ, বুলগেরিয়া, এস্তোনিয়া ও উরুগুয়ে।
ফোর্বস ম্যাগাজিন ২০২২ সালের শীর্ষ ধনীদের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তবে এ প্রতিবেদনে আরও জানা যায়, শীর্ষ ধনীদের সম্পদের পরিমাণ কমেছে। চলমান মহামারি এবং সাম্প্রতিক রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে এ সম্পদ কমেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বছরের তালিকায় স্থান পেয়েছেন ২ হাজার ৬৬৮ জন, গত বছরের তুলনায় ৮৭ জন কম। তাদের মোট সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৭ ট্রিলিয়ন ডলার বা ১২ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি ডলার কম।
এ বছরের শীর্ষ ধনীদের তালিকায় সবার আগে আছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ কোম্পানি টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইলন মাস্ক। তার মোট সম্পতি দাঁড়িয়েছে ২১৯ বিলিয়ন ডলার। গত দুই বছরে তার সম্পদ বেড়েছে রকেটের গতিতে। প্রতিবেদনে তার সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি পৃথিবী ও মহাজগতের পরিবহন ব্যবস্থা আমূল বদলে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছেন। একদিকে টেসলার মাধ্যমে বৈদ্যুতিক গাড়ি এনে তিনি পরিবেশবান্ধব পরিবহনের দিকপাল হয়ে উঠেছেন; পাশাপাশি তিনি স্পেসএক্স কোম্পানির মাধ্যমে রকেট তৈরি করছেন। টেসলার ২১ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। সম্প্রতি তিনি সামাজিক মাধ্যম টুইটারের ৯ দশমিক ২ শতাংশ শেয়ার কেনার ঘোষণা দিয়ে হইচই ফেলে দিয়েছেন। শিগগিরই তিনি টুইটারের পরিচালনা পর্ষদে যোগ দেবেন।
তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে আছেন অনলাইন মার্কেটপ্লেস আমাজনের প্রতিষ্ঠাতা জেফ বেজোস। তার মোট সম্পতি ১৭১ বিলিয়ন ডলার। ১৯৯৪ সালে তিনি আমাজন প্রতিষ্ঠা করেন। তবে ২০২১ সালে তিনি আমাজনের ৮৮০ কোটি ডলারের শেয়ার বিক্রি করে দেন। এরপর প্রধান নির্বাহীর পদ ছেড়ে তিনি নির্বাহী চেয়ারম্যান হন। তবে আমাজনের গুদামে শ্রমিকদের মানবেতর পরিস্থিতিতে কাজ করতে হয় বলে অভিযোগ আছে। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটের কাছে তাকে একবার জবাবদিহি করতে হয়েছে।
শীর্ষ ১০ ধনীর তালিকায় এশীয়দের মধ্যে স্থান পেয়েছেন কেবল ভারতের রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রির চেয়ারম্যান মুকেশ আম্বানি। স্বাভাবিকভাবেই তিনি ভারতের শীর্ষ ধনী। পেট্রোকেমিক্যাল, তেল, গ্যাস ও টেলিকম খাতে ব্যবসা আছে রিলায়েন্সের। গত কয়েক বছরে তার টেলিকম সাম্রাজ্য অনেকটাই ফুলে–ফেঁপে উঠেছে। আর মহামারির মধ্যে তার রিলায়েন্সে ফেসবুক ও গুগল বিনিয়োগ করেছে। ফলে গত দুই বছরে তার সম্পদ অনেকটাই বেড়েছে। তার মোট সম্পদ ৯০ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার।
তালিকায় এবারও যথারীতি আমেরিকানদের প্রাধান্য আছে। শীর্ষ ধনীদের মধ্যে ৭৩৫ জনই আমেরিকান। তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ৪ লাখ ৭০ হাজার কোটি ডলার। এরপর দ্বিতীয় স্থানে আছেন চীনারা। তালিকায় চীনা ধনীর সংখ্যা ৬০৭। তাদের সম্মিলিত সম্পদের পরিমাণ ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার।
এবার সবচেয়ে মার খেয়েছেন রুশ ধনীরা। ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু করার কারণে রাশিয়া এখন নানা রকম আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধের কবলে পড়েছে। এতে তাদের ধনীদের সংখ্যা অনেকটাই কমে গেছে। এবার তালিকায় রুশ ধনীদের সংখ্যা গতবারের চেয়ে ৩৪ জন কম। চীনাদের সংখ্যাও ৮৭ জন কমেছে। সেখানে অবশ্য ভিন্ন ঘটনা। চীনা সরকার বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর ওপর খড়গহস্ত হওয়ার কারণে তালিকায় তাদের সংখ্যা কমেছে।
তবে এ বছর সবচেয়ে বড় চমকের জন্ম দিয়েছেন ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ; তবে সম্পদ বৃদ্ধির দিক থেকে নয়, হ্রাসের দিক থেকে। এক সময় শীর্ষ ধনীর তালিকায় ওপরের দিকে থাকলেও এবার তিনি ১৫ নম্বরে নেমে গেছেন। মূলত কয়েক বছর ধরে মানুষের তথ্য নিয়ে কারসাজির অভিযোগ উঠছে ফেসবুকের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে মার্কিন সিনেটের কাছে জবাবদিহি করতে হয়েছে তাকে। এসবের জেরে ফেসবুকের শেয়ারের মূল্য কমে যাওয়ায় সম্পদ কমে গেছে জাকারবার্গের।
ফোর্বস–এর তথ্যানুসারে, চলতি বছরের ১১ মার্চের পর এই ধনীদের স্টক মূল্য ও মুদ্রার বিনিময় হারের সাপেক্ষে এই তালিকা করা হয়েছে। স্টকের মূল্য প্রতিক্ষণে বদলায়, তাদের সম্পদের পরিমাণও ক্ষণে ক্ষণে বদলায়। সে জন্য ফোর্বস–এর তালিকায় তাৎক্ষণিক সম্পদের পরিমাণ দেখারও সুযোগ আছে।
টিটি/