রাশিয়া আরও আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে: ন্যাটো
ইউক্রেনে চলমান সামরিক আগ্রাসনে রাশিয়া আরও আগ্রাসী ও হিংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবার্গ।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) এক বিবৃতিতে স্টলটেনবার্গ জানান, ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণাঞ্চলে রুশ বাহিনী আরও বিধ্বংসী হয়ে উঠবে। এ সময় নতুন সমরাস্ত্র নিয়ে রাশিয়ার সেনারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে ডনবাস হয়ে অধিকৃত ক্রিমিয়া পর্যন্ত ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পারে বলে জানান তিনি।
রাশিয়ার বিপক্ষে বা ইউক্রেনের হয়ে সরাসরি যুদ্ধে না জড়ানোর বিষয়টি আবারও খোলাসা করেছেন স্টলটেনবার্গ। তবে রুশ হামলা ঠেকাতে ইউক্রেনকে আরও সাঁজোয়া ট্যাংক, যুদ্ধবিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রসহ ভারী সমরাস্ত্র জোগান দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি।
এ সময় রুশ বাহিনীর আগ্রাসনের কারণে মস্কোর সঙ্গে সব ধরনের আলোচনার পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন নরওয়ের অভিজ্ঞ এই সামরিক বিশেষজ্ঞ।
রুশ হামলার জবাব দিতে রাশিয়ার সীমান্তবর্তী দেশ হাঙ্গেরিতে ৮০০, রোমানিয়ায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার, বুলগেরিয়ায় ৯০০, স্লোভেনিয়ায় দুই হাজারের বেশি ও বাল্টিক অঞ্চলের দেশগুলোতে মোট ৪০ হাজার ন্যাটো সেনাকে যুদ্ধ জাহাজ, কামান, গোলাবারুদ, যুদ্ধ বিমানসহ ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেন স্টলটেনবার্গ।
এদিকে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৪ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলারের সমরাস্ত্র কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির প্রতিবেশী দেশ পোল্যান্ড।
তবে ইউক্রেনকে ভারী অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম দিয়েও রুশ বাহিনীকে ঠেকানো অসম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ইইউ ও ন্যাটো সীমা লঙ্ঘন করলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ। অভিযান শেষ না হওয়া পর্যন্ত রুশ বাহিনী থামবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেন পুতিন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
৪১ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ৪২তম দিন। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/