শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের ডাকে মন্ত্রিসভায় আসবেন না বিরোধীরা
স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের মুখে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। দেশজুড়ে চলছে চরম হাহাকার, অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন অনেকে। দেশটির রিজার্ভে অর্থ নেই বললেই চলে। ডলার সংকটে পণ্য আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। অন্যদিকে তেলের অভাবে দেশজুড়ে নেমে এসেছে অন্ধকার। সবমিলিয়ে ভয়াবহ অচলাবস্থায় রয়েছে শ্রীলঙ্কা। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
সংকট মোকাবিলায় সরকারের ব্যর্থতার প্রতিবাদে শুরু হওয়া বিক্ষোভ দমনে প্রথমে জরুরি অবস্থা, পরে কারফিউ জারি করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেসবুক, টুইটারও। এর মধ্যেই একযোগে পদত্যাগ করেছেন দেশটির ২৬ মন্ত্রী। পদত্যাগ করেছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরও।
এর পরপরই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঐক্যের সরকারের ডাক দেন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে। সোমবার (৪ এপ্রিল) প্রেসিডেন্টের কার্যালয় থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপক্ষে পার্লামেন্টে থাকা সব রাজনৈতিক দলকে মন্ত্রিসভায় পদ গ্রহণ এবং জাতীয় সংকট সমাধানের প্রচেষ্টায় নিজেদের সম্পৃক্ত করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় প্রয়োজন’ বিবেচনা করে সব নাগরিক এবং ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে এক সঙ্গে কাজ করা প্রয়োজন বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। তবে প্রেসিডেন্টের এ উদ্যোগকে ‘অযৌক্তিক’ অভিহিত করে তার আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছেন বিরোধী নেতারা।
দেশটির বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক জোট ইউনাইটেড পিপলস পাওয়ার বা এসজেবি প্রেসিডেন্টের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এসজেবির শীর্ষ কর্মকর্তা রঞ্জিত মাদুমা বান্দারা মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে (এপি) বলেন, এই দেশের মানুষ গোতাবায়া এবং পুরো রাজাপক্ষে পরিবারের বিরুদ্ধে। আমরা জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে পারি না এবং দুর্নীতিবাজদের সাথে কাজ করতে চাই না। ২২৫ সদস্যের সংসদে এসজেবির ৫৪ জন সাংসদ রয়েছে।
বামপন্থী পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট (জেভিপি) রাজাপক্ষে এবং তার এক সময়ের জনপ্রিয় ও শক্তিশালী পরিবারকে অবিলম্বে পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছে। জেভিপির এমপি অনুরা দিসানায়কা কলম্বোতে সাংবাদিকদের বলেন, তাকে সত্যিই পাগল হতে হবে। কারণ বিরোধী সংসদ সদস্যরা এমন একটি সরকারকে সমর্থন করবে না যেটি ভেঙে যাচ্ছে।
প্রধান সংখ্যালঘু বিরোধী দল তামিল ন্যাশনাল অ্যালায়েন্সও (টিএনএ) রাজাপক্ষের নেতৃত্বাধীন সরকারে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেছে।
তবে অস্থিরতার মধ্যেও নতুন অর্থমন্ত্রী এবং সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলঙ্কা (সিবিএসএল) বা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নতুন গভর্নর পেয়েছে শ্রীলঙ্কা। সিবিএসএলের সাবেক কর্মকর্তা পি. নন্দলাল ওয়েরাসিংহে সোমবার জানান, তিনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরবর্তী গভর্নর হওয়ার জন্য রাজাপক্ষের কাছ থেকে পাওয়া একটি প্রস্তাব গ্রহণ করেছেন।
এ ছাড়া প্রেসিডেন্টের মিডিয়া কার্যালয় জানায়, অর্থমন্ত্রী হিসেবে গোতাবায়া রাজাপক্ষের ছোট ভাই বাসিল রাজাপক্ষের স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন বিচারমন্ত্রী আলি সাবরি। পদে থাকছেন পররাষ্ট্র, শিক্ষা ও সড়ক মন্ত্রীও।
এদিকে জরুরি অবস্থার মধ্যেও শ্রীলঙ্কায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। আর বিক্ষোভ দমনে কঠোর অবস্থান নিয়েছে নিরাপত্তাবাহিনী। রাজধানী কলম্বোসহ বিভিন্ন শহর থেকে কয়েক শ বিক্ষোভকারীকে আটকও করেছে পুলিশ।
এসএ/