আগাম নির্বাচনের পথে পাকিস্তান
আগাম নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে পাকিস্তান। দেশটির প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সুপারিশে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পর নতুন নির্বাচনকেই সমাধানের পথ বলে মনে করা হচ্ছে। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে জাতীয় পরিষদ ভেঙে দিতে প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে পরামর্শ দিয়েছেন ইমরান খান। আজ রবিবার (৩ এপ্রিল) জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে ইমরান এই আহ্বান জানান তিনি। ইমরানের প্রস্তাবে সমর্থন দিয়ে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন।
জাতীয় পরিষদের ডেপুটি স্পিকারের সভাপতিত্বে রবিবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টার দিকে অধিবেশন শুরু হয়। সেখানে বিরোধীদের উত্থাপিত অনাস্থা প্রস্তাবকে তিনি ‘অসাংবিধানিক’ আখ্যা দিয়েছেন।
ষড়যন্ত্রের কারণে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাশিম সুরি। এরপরই অধিবেশন মুলতবি করেন তিনি। এক পর্যায়ে বিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে।
এর আগে জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের আগে সকালে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে রাজধানী ইসলামাবাদে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। নেওয়া হয় বাড়তি নিরাপত্তা।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এখন বিরোধীরা সুপ্রিম কোর্টে যাবেন। তবে প্রেসিডেন্ট পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ায় আগাম নির্বাচনের সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী, এই সময়কালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খানই ক্ষমতায় থাকবেন। ইমরান খান আগেই জানিয়েছেন, এ সময়ে তিনি অবস্থান করবেন প্রধানমন্ত্রী হাউসে। বিশেষ পরিস্থিতি সৃষ্টি না হলে তিনি সেখানেই থাকবেন।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দেয় বিরোধী দলগুলো। এ প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানান তারা।
পাকিস্তানের সংবিধান অনুযায়ী, লিখিত আবেদন জমার ১৪ দিনের মধ্যে স্পিকারকে আলোচনার জন্য অধিবেশন ডাকতে হবে। সে অনুযায়ী, ২২ মার্চের মধ্যে অধিবেশন আয়োজন করার কথা ছিল।
তবে ২২ মার্চ থেকে জাতীয় পরিষদে ওআইসির দুই দিনব্যাপী পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলন শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। এরপরই অধিবেশনের তারিখ পেছায়।
নিম্নকক্ষে ৩৪২ আসনের মধ্যে বিরোধীদের দখলে আছে ১৬৩টি। বাকি ১৭৯ আসন। এর মধ্যে ইমরানের দলের আছে ১৫৫টি, চার জোট সঙ্গীর ২০টি।
অনাস্থা প্রস্তাবে টিকে থাকতে হলে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) ইমরান খানকে অন্তত ১৭২ সদস্যের সমর্থন পেতে হতো। এর মধ্যে তিন জোটসঙ্গী মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএম-পি), পাকিস্তান মুসলিম লিগ-কায়েদ (পিএমএল-কিউ) এবং বালুচিস্তান আওয়ামী পার্টি (বিএপি) বিরোধী শিবিরে যোগ দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে।
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত তার সরকারের মেয়াদ রয়েছে।
এর আগে তিন বছরের মাথায় গত মার্চে অনাস্থা ভোট হয় ইমরানের বিরুদ্ধে। সেবার সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় অনায়াসেই উতরে গিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার অনাস্থা ভোটের আগে ইমরান খান সাফ জানিয়ে দেন, ভোটে যা-ই হোক, পদত্যাগ করবেন না তিনি।
এসএ/