শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

ইলন মাস্ক: সময়ের আলোচিত মুখ

শৈশবে বই পড়তে ভালোবাসতেন। আইজাক আসিমভের ফাউন্ডেশন সিরিজের বই পড়ে উপলব্ধি করেন, সভ্যতার বিকাশে অন্ধকার যুগের সম্ভাবনা ও স্থায়িত্বকাল কমাতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মাত্র দশ বছর বয়সে কমোডর ভিআইসি-২০ কম্পিউটার নাড়াচাড়া করতে করতে তিনি হয়ে গেলেন প্রোগ্রামার।

১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে তৈরি করে ফেললেন ভিডিও গেম ‘ব্লাস্টার’। প্রযুক্তি জগতে পদার্পণের শুরুর দিকে নানা ব্যর্থতার মুখোমুখি হলেও তিনি এখন সময়ের আলোচিত মুখ। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তিটির নাম ইলন মাস্ক। সম্প্রতি তাকে বর্ষসেরা ব্যক্তিত্ব বা ‘পারসন অব দ্য ইয়ার’ ঘোষণা করেছে মার্কিন সাময়িকী ‘টাইম’ ম্যাগাজিন। তার ব্যক্তিগত সম্পদের পরিমাণ ২৮১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। পরিবহনের ধারণা বদলে দিয়ে প্রযুক্তির নতুন দ্বার উন্মোচন করেছেন তিনি। ব্যাটারিচালিত গাড়ি, পাতাল পরিবহন আর পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির মাধ্যমে বিজ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছেন প্রযুক্তিখাতের এই পথপ্রদর্শক।

১৯৯৫ সালে ইলন মাস্ক তার ভাই কিম্বল এবং গ্রেগ কৌরি এঞ্জেল ওয়েব সফটওয়্যার সংস্থা জিপ-২ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সংস্থাটি মানচিত্র, দিকনির্দেশনাসহ সংবাদপত্র প্রকাশনা শিল্পের জন্য একটি ইন্টারনেট সিটি গাইড তৈরি করে তা বাজারজাত করে। ১৯৯৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ৩০৭ মিলিয়ন ডলারে জিপ-২ কিনে নেয় কমপ্যাক।

ইলন মাস্ক এরপর প্রতিষ্ঠা করলেন পেপাল। অনলাইনে অর্থ আদান-প্রদান এবং কেনাকাটার বিল পরিশোধ করার জনপ্রিয় মাধ্যম পেপাল। ইলন মাস্ক হলেন পেপাল এর অন্যতম সহপ্রতিষ্ঠাতা। বর্তমানে ডিজিটাল পেমেন্ট ব্যবস্থায় রীতিমতো নেতৃত্ব দিচ্ছে পেপাল। বিশ্বের ২০০টির অধিক দেশে ৩৬০ মিলিয়নের বেশি ব্যবহারকারী রয়েছে পেপালের।

২০০১ সালে মাস্ক মঙ্গল ওসিসকে কল্পনা করে মঙ্গল গ্রহে একটি ক্ষুদ্র গ্রিনহাউস তৈরির ধারণা দেন। যা ফসল বাড়ানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করবে এবং মহাকাশ অনুসন্ধানে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করবে। মাস্ক ২০০২ সালের মে মাসে স্পেস এক্সপ্লোরেশন টেকনোলজিস কর্পস (স্পেসএক্স) প্রতিষ্ঠা করেন। তিনটি ব্যর্থ লঞ্চের পরে স্পেসএক্স ২০০৮ সালে ফ্যালকন ১ চালু করতে সফল হয়। এটি পৃথিবীর কক্ষপথে পৌঁছানোর প্রথম ব্যক্তিগত তরল-জ্বালানী রকেট ছিল।

প্রচলিত রকেট একবার মহাশূন্যে গিয়ে আর ফেরে না। এই ভাবনা থেকে মাস্ক ২০১৪ সালে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য রকেট তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে। চারবারের চেষ্টায় মহাকাশে রকেট পাঠাতে সফল হয় স্পেসএক্স।

স্পেসএক্স পরে সফলভাব সমুদ্র-ভিত্তিক পুনরুদ্ধার প্ল্যাটফর্ম, স্বায়ত্তশাসিত স্পেসপোর্টের ড্রোন জাহাজে ল্যান্ডিং করতে সক্ষম হয়। ২০১৮ সালে স্পেসএক্স ফ্যালকন হেভি চালু করে। ২০১৭ সালে স্পেসএক্স তার পরবর্তী প্রজন্মের প্রবর্তন গাড়ি এবং মহাকাশযান সিস্টেম, বিগ ফ্যালকন রকেট (বিএফআর) উন্মোচন করে।

২০১৮ সালে স্পেসএক্স একটি চন্দ্র টার্নিভিগেশন মিশন-২০২৩ ঘোষণা করে। যা একটি বেসরকারি বিমান। ২০২০ সালে স্পেসএক্স তার প্রথম চালিত ফ্লাইট ডেমো-২ চালু করে। এখন স্পেসএক্সের বাজারমূল্য ১০০ বিলিয়ন ডলারের ওপরে।

ইলন মাস্ক প্রতিষ্ঠা করলেন ব্যাটারিচালিত গাড়ি তৈরির কোম্পানি টেসলা। ২০০৮ সালে রোডস্টার নামে একটি বৈদ্যুতিক স্পোর্টস গাড়ি তৈরি করেছিল এ কোম্পানি। এটি লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারি কোষ ব্যবহার করার জন্য প্রথম উৎপাদিত সর্ববৈদ্যুতিক গাড়ি। ২০২০ সালে সবচেয়ে মূল্যবান গাড়ি প্রস্তুতকারক হয়ে উঠেছে এ কোম্পানি। টেসলা এখনকার বাজারে অন্যতম এক ব্র্যান্ড। কোম্পানির বাজারমূল্য এক ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি।

মাস্ক ২০০৮ সালে সিইও এবং পণ্য স্থপতি হিসেবে সংস্থার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী ইলন মাস্ক বিশ্বে মোটরগাড়ি প্রস্তুতকারক কোম্পানির দীর্ঘমেয়াদী সিইও।

এ ছাড়া ইলন মাস্ক সোলারসিটির চেয়ারম্যান ও দি বোরিং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। নিউরোটেকনোলজি স্টার্টআপ সংস্থা নিউরালিংকের সহ-প্রতিষ্ঠাতা হিসেবেও সফলতার দৃষ্টান্ত রাখেন তিনি।

ইলন রিভ মাস্ক দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে ১৯৭১ সালের ২৮ জুন জন্মগ্রহণ করেন। তার মা মেই মাস্ক একজন মডেল এবং ডায়েটিশিয়ান। তিনি কানাডার সাসকাচোয়ানে জন্মগ্রহণ করেন। তবে বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকাতে। ইলন মাস্কের বাবা হলেন দক্ষিণ আফ্রিকার একজন তড়িৎ প্রকৌশলী, বৈমানিক, নাবিক, পরামর্শক এবং সম্পত্তি বিকাশকারী। তার একটি ছোট ভাই কিম্বল এবং একটি ছোট বোন টসকা আছে। তার নানা জশুয়া হাল্ডম্যান একজন আমেরিকান বংশদ্ভূত কানাডিয়ান নাগরিক। তার দাদি ব্রিটিশ এবং পেনসিলভেনিয়া ডাচ বংশদ্ভুত।

১৯৮০ সালে তার বাবা-মায়ের বিবাহ বিচ্ছেদের পর মাস্ক বেশিরভাগ সময় তার পিতার সঙ্গে প্রিটোরিয়া শহরে থাকতেন। বিবাহ বিচ্ছেদের দুই বছর পরে তিনি বাবার সঙ্গে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্তের জন্য আফসোসও করেছিলেন মাস্ক।

কানাডা থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা সহজতর হবে জেনে মাস্ক কানাডিয়ান বংশোদ্ভূত মায়ের মাধ্যমে কানাডার পাসপোর্টের জন্য আবেদন করেন। ভিসা প্রাপ্তির কাগজপত্রের জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় তিনি ছয় মাস প্রিটোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন। যার ফলে তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বাধ্যতামূলক সামরিক প্রশিক্ষণ এড়াতে পেরেছিলেন।

১৯৮৯ সালের জুন মাসে কানাডায় আসার পর মন্ট্রিয়লে তার দাদার ভাইকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হন। এ সময় তিনি তরুণদের জন্য নির্মিত একটি হোস্টেলে থাকতেন। এরপর তিনি সাসকাচোয়ানের পশ্চিমে তার এক খালাতো ভাইয়ের সঙ্গে চলে যান। তিনি এক বছর সেখানে থাকা অবস্থায় একটি খামারে ও কাঠের কারখানায় কাজ করতেন।

১৯৯০ সালে মাস্ক কানাডার অন্টারিও রাজ্যের কিংস্টন শহরের কুইন্স বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। দুই বছর পর তিনি পেন্সিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হন। ১৯৯৭ সালে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়ার্টন স্কুল থেকে অর্থনীতিতে ও ইউপ্যান স্কুল অব আর্টস অ্যান্ড সায়েন্স হতে পদার্থ বিজ্ঞানের ওপর স্নাতক সম্পন্ন করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সময় কানাডিয়ান লেখক জাস্টিন উইলসনের সঙ্গে দেখা হয় মাস্কের। তারা ২০০০ সালে বিয়ে করে এবং ২০০৮ সালে পৃথক হয়। তাদের প্রথম ছেলে নেভাদা আলেকজান্ডার মাস্ক। ১০ সপ্তাহ বয়সে আকস্মিক শিশু মৃত্যুর সিন্ড্রোমে (এসআইডিএস) মারা যায় তার প্রথম সন্তান।

২০০৮ সালে মাস্ক ইংরেজ অভিনেত্রী তালুলাহ রিলের সঙ্গে দ্বিতীয় সম্পর্কে জড়ান। ২০১০ সালে এই দম্পতি বিয়ে করেন। ২০১২ সালে মাস্ক ও রিলে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেয়। ২০১৩ সালে তারা পুনরায় বিয়ে করেন। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে মাস্ক দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। তবে পদক্ষেপটি প্রত্যাহার করা হয়। ২০১৬ সালে তার দ্বিতীয় বিবাহবিচ্ছেদ চূড়ান্ত হয়।

অ্যাম্বার হিয়ার্ডের সঙ্গে ২০১২ সালে সাক্ষাৎ হয় মাস্কের। ২০১৭ সালে জনি ডেপের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর মাস্কের বিরুদ্ধে হিয়ার্ডের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল বলে অভিযোগ করা হয়েছিল।

ইলন মাস্ক ও গ্রিমস

২০১৮ সালের মে মাসে মাস্ক এবং কানাডিয়ান সংগীতশিল্পী গ্রিমস প্রকাশ করেছেন যে, তারা সম্পর্কে জড়িয়েছেন। গ্রিমস ২০২০ সালের মে মাসে তাদের পুত্রের জন্ম দেন।

২০০০ সালের গোড়ার দিক থেকে ২০২০ সালের শেষের দিক পর্যন্ত মাস্ক ক্যালিফোর্নিয়ার লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলে বাস করতেন। যেখানে টেসলা এবং স্পেসএক্স উভয়ই প্রতিষ্ঠিত ছিল। যেখানে তাদের সদরদপ্তর এখনও রয়েছে। ২০২০ সালের ডিসেম্বর থেকে মাস্ক টেক্সাসে বসবাস করছেন।

টিটি/এসএ/

Header Ad
Header Ad

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি: সংগৃহীত

আগামী জাতীয় নির্বাচন হবে বাংলাদেশের ইতিহাসের সর্বোত্তম নির্বাচন—এমন মন্তব্য করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, এ নির্বাচন হবে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক, যা দেশের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবে।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) রাজধানীর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস (এএনএফআরইএল)-এর একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি এ কথা বলেন।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন—সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ব্রিজা রোসালেস, বাংলাদেশ নির্বাচন ও গণতন্ত্র কর্মসূচির পরামর্শক মে বুটয়, সিনিয়র প্রোগ্রাম অফিসার থারিন্ডু আবেরত্না, প্রোগ্রাম অফিসার আয়ান রহমান খান এবং প্রোগ্রাম অ্যাসোসিয়েট আফসানা আমেই।

এএনএফআরইএল হচ্ছে এশিয়ার একটি নির্বাচনভিত্তিক নাগরিক সংগঠন, যারা বিগত দুই দশক ধরে সুষ্ঠু নির্বাচন, গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং নাগরিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে কাজ করে যাচ্ছে।

সাক্ষাতে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে তাদের চলমান কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবহিত করে। তারা জানান, বাংলাদেশে একটি স্বাধীন ও নাগরিকচালিত নির্বাচন পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারা স্টেকহোল্ডার ম্যাপিং ও প্রয়োজন নির্ধারণমূলক কর্মকাণ্ডের কথাও তুলে ধরেন, যা দেশের সুশীল সমাজের কার্যকর সম্পৃক্ততা ও নির্বাচনের স্বচ্ছতা বাড়াতে সহায়ক হবে।

প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ পেয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে এবং একটি স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট অংশীদারদের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে।

Header Ad
Header Ad

বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী

ছবি: সংগৃহীত

ভারত বাংলাদেশ সম্পর্কে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, ভারত দাবি করছে—বাংলাদেশ নাকি ধ্বংস হয়ে গেছে, এ দেশ আর টিকে নেই। এসব বক্তব্যের কোনো ভিত্তি নেই, এটি দেশের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।

শনিবার দুপুরে নাটোর জেলা পরিষদ অডিটরিয়ামে জিয়া পরিষদের আয়োজনে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। রিজভী বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান আমাদের জাতীয়তাবাদ, স্বাধীনতা ও আত্মপরিচয়ের ভিত্তি গড়ে দিয়েছেন। সেই পথেই খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নেতৃত্বে বিএনপি আজও জনগণের দল হিসেবে টিকে আছে। বিএনপি এমন একটি দল, যাকে কোনো ষড়যন্ত্র দিয়ে দমিয়ে রাখা যায় না।

ভারতকে উদ্দেশ করে রিজভী বলেন, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করে না, তারা চায় এই দেশ ভারতের অনুগত হয়ে থাকুক। তাই তারা একটি তাবেদার রাষ্ট্র গঠনের স্বপ্ন দেখেছে। শেখ হাসিনার মাধ্যমে তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের চেষ্টা চালিয়েছে। ফ্যাসিবাদী শাসনের ছত্রছায়ায় এই সরকার গুম, খুন, দমন-পীড়নের রাজনীতি চালিয়ে গেছে। সেই শাসনব্যবস্থাকে রক্ষা করতে ভারত মদত দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, শেখ হাসিনা নিজেই বলেছেন—ভারতকে যা দিয়েছেন, তারা তা সারা জীবন মনে রাখবে। জনগণ এখন সেই কথার অর্থ বুঝতে পেরেছে। দেশের সম্পদ লুটপাট, টাকা পাচার, বিরোধীদের দমন—সবই করা হয়েছে ভারতের আশীর্বাদে। এখন ভারত তাদের সহানুভূতি দেখাচ্ছে, কারণ তারা চায় বাংলাদেশকে নিজেদের প্রভাবাধীন রাখতেই।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাটোর জিয়া পরিষদের সভাপতি আহমুদুল হক চৌধুরি স্বপন এবং সঞ্চালনায় ছিলেন সাধারণ সম্পাদক শাহ্ মো. শফিকুল ইসলাম।

প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট এম রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। আরও বক্তব্য রাখেন জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী মহাসচিব প্রফেসর ড. মো. এমতাজ হোসেন, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক কাজী গোলাম মোর্শেদ, রাজশাহী বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ মো. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব, নাটোর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক রহিম নেওয়াজ, সদস্য সচিব মো. আসাদুজ্জামান আসাদসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

বক্তারা দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিদেশি প্রভাবের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র রক্ষার আহ্বান জানান।

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

দেশের ইতিহাসে এবারের নির্বাচন সর্বোত্তম হবে: প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে ভারত: রিজভী
ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত