চীনে বিমান দুর্ঘটনায় মরিয়া তল্লাশি, উদ্ধার হয়নি কোনো মরদেহ
চীনে ১৩২ আরোহী নিয়ে বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের যাত্রীদের উদ্ধারে তৎপর উদ্ধারকর্মীরা। জীবিত কাউকে খুঁজে পাওয়া কিংবা ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে উদ্ধারকারীদের জন্য।
চীনের দক্ষিণে গুয়াংশির পার্বত্য এলাকায় পাহাড়ি ঢালের ঘন বনাঞ্চলে সোমবার চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমইউ-৫৭৩৫ বিধ্বস্ত হয়।
সেদেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের বরাতে দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি পাহাড়ের ঢালে বিধ্বস্ত হয়ে আগুন ধরে যায় এবং এর বিভিন্ন অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে ছড়িয়ে পড়ে।
তাৎক্ষণিকভবে কয়েকশ উদ্ধারকর্মী সেখানে ছুটে গেলেও দুর্গম ওই জঙ্গলের মধ্যে ধ্বংসাবশেষ ছাড়া অন্য কিছু তারা পাননি। বিমানের পাখার ভাঙা অংশ, কাপড়ের টুকরোসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র সেখানে ছড়িয়ে পড়েছে বড় এলাকাজুড়ে।
চীনের দক্ষিণপশ্চিমের শহর কুনমিং থেকে ফ্লাইট এমইউ৫৭৩৫ ইউনান প্রদেশের রাজধানী গুয়াংসশির পথে যাচ্ছিল। মাঝপথে ক্রুজিং উচ্চতায় আকাশ থেকে উড়োজাহাজটি খসে পড়ে এবং বিধ্বস্ত হয়।
দুর্ঘটনার সময় কাছাকাছি মহাসড়কের একটি গাড়ির ড্যাশবোর্ডের ক্যামেরায় ধারণ করা একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে চীনের গণমাধ্যম, যেখানে দেখা গেছে উড়োজাহাজটি যেন সরাসরি আকাশ থেকে মাটির দিকে ডাইভ দিয়েছে।
ফ্লাইটরেডার টোয়েন্টিফোরের ডেটা বলছে, বিধ্বস্ত হওয়ার আগে উড়োজাহাজটি মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে কয়েক হাজার ফুট নিচে নেমে আসে।
রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত বেইজিং ইয়ুথ ডেইলি স্থানীয় এক বাসিন্দাকে উদ্ধৃত করে লিখেছে, 'বিমানটি যেন খাড়াভাবে মাটিতে আছড়ে পড়ল। আমি অনেক দূরে থাকলেও দেখতে পেয়েছিলাম যে সেটা একটা উড়োজাহাজ। ভূপতিত হওয়ার সময় বিমান থেকে কোনো ধোঁয়া বের হতে দেখিনি। সেটা পাহাড়ের গায়ে আছড়ে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়।'
চীনে বহু বছরের মধ্যে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা এটি। এর আগে ২০১০ সালের অগাস্টে এক দুর্ঘটনায় ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এ দুর্ঘটনায় সমবেদনা জানাতে দুর্ঘটনার পর চায়না ইস্টার্নের ওয়েবসাইট সাদাকালো করে দেওয়া হয় এবং কোম্পানির পক্ষ থেকে শোকবার্তা প্রকাশ করা হয়।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে এই পরিস্থিতিকে ‘দুঃখজনক’ হিসেবে আশঙ্কা প্রকাশ করে যে, সম্ভবত আরোহীদের কেউ বেঁচে নেই।
নিয়মিত অগ্নিনির্বাপণ উদ্ধারকারী দল ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি চীনের উড়োজাহাজ চলাচল কর্তৃপক্ষ দুর্ঘটনার স্থানে একটি দল পাঠিয়েছে।
উদ্ধারকাজ ও দুর্ঘটনার তদন্ত কাজ তদারক করতে চীনের উপপ্রধানমন্ত্রী লিউ হে সোমবার রাতেই গুয়াংশির উঝৌ শহরে পৌঁছেছেন।
চীনের স্টেট কাউন্সিল বা মন্ত্রিসভা জানিয়েছে, এ দুর্ঘটনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে কর্মকর্তাদের নিয়োজিত করা হবে যাতে দ্রুত দুর্ঘটনার কারণ জানা যায় এবং সিভিল এভিয়েশন খাতে সম্ভাব্য নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো চিহ্নিত করে সুরক্ষার ব্যবস্থা করা যায়।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে জানানো হয়েছে, যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে, সে জায়গাটি তিন দিকে পাহাড় দিয়ে ঘেরা এবং মাত্র একটি দিক থেকে একটি সরু প্রবেশপথ রয়েছে। এ সপ্তাহে ওই এলাকায় বৃষ্টিপাতেরও পূর্বাভাস আছে।
যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক আর ডব্লিউ মান অ্যান্ড কোম্পানির এভিয়েশন বিশ্লেষক রবার্ট মান বলেছেন, কেন বিমানটি খাড়া নিচ দিকে ডাইভ দিল, তা বোঝার জন্য ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডারগুলো উদ্ধার করা দরকার।
চীনে বাণিজ্যিক জেটলাইনার বিধ্বস্ত হওয়ার সর্বশেষ ঘটনাটি ছিল ২০১০ সালের। ইচুন বিমানবন্দরে অবতরণ করার সময় হেনান এয়ারলাইন্সের একটি এমব্রায়ের ই-১৯০ জেট বিধ্বস্ত হয়ে ৯৬ আরোহীর ৪২ জনের মৃত্যু হয়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের দুর্ঘটনার পেছনে একাধিক কারণ থাকতে পারে। চায়না ইস্টার্নের এই উড়োজাহাজ কেন দুর্ঘটনায় পড়ল, তার কারণ খুঁজতে গিয়ে অনুমানের ওপর নির্ভর করা ঠিক হবে না। কারণ, এখন পর্যন্ত খুব কম তথ্যই জানা গেছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, সোমবারের দুর্ঘটনার পর চায়না ইস্টার্ন তাদের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজের বহর ব্যবহার স্থগিত করেছে। ফ্লাইটরাডার২৪ ওয়েবসাইটেরর তথ্য অনুযায়ী, ওই এয়ারলাইন্সের কাছে বোয়িংয়ের ওই মডেলের ১০৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে।
টিটি/