পুতিনকে সাহায্য করলে নিষেধাজ্ঞার হুমকি বাইডেনের
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর নিষেধাজ্ঞার পাহাড় জমিয়েছে পশ্চিমা জোট। কেউ রাশিয়াকে সমর্থন করলে তার বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার কথা বলে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। শুক্রবার (১৮ মার্চ) ইউক্রেন ইস্যুতে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এক ভিডিও সংলাপে একই মন্তব্য আবারও ব্যক্ত করেছেন করেন তিনি।
সংলাপের পর হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘ইউক্রেনের শহর ও বেসামরিকদের বিরুদ্ধে নৃশংস হামলা চালানোর জন্য রাশিয়াকে বস্তুগত সহায়তা প্রদান করলে চীনকে কঠিন পরিণতি ভোগ করতে হবে।’ তবে রুশ প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেনে আক্রমণ বন্ধ করতে রাজি করার জন্য শিকে সরাসরি কোনো অনুরোধ করেননি বাইডেন।
দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে হোয়াইট হাউস বলেছে, উভয় পক্ষই সংকটের কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছে। তবে ‘বস্তুগত সহায়তা’ বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা পরিষ্কার করেনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের কার্যালয়।
বাইডেন-শি বৈঠকের পর চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে, শি মার্কিন প্রেসিডেন্টকে ইউক্রেনের যুদ্ধ যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করতে এবং ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোকে মস্কোর সঙ্গে সংলাপ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বাইডেনের সঙ্গে ভিডিও সংলাপে চীনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এখন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হল সংলাপ এবং আলোচনা চালিয়ে যাওয়া, বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়ানো, মানবিক সংকট রোধ করা এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যুদ্ধ শেষ করা।’
ওয়াশিংটন ও ন্যাটোকে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার পরামর্শও দিয়েছেন শি জিনপিং। এ ছাড়া হুশিয়ারি দিয়েছেন মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধেও।
শি বলেন, ‘নির্বিচার নিষেধাজ্ঞাগুলো শুধুমাত্র জনগণকে ভোগাবে। যদি এসব আরও বাড়তে থাকে, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতি এবং বাণিজ্য, জ্বালানি, খাদ্য এবং শিল্প এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে গুরুতর সঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।’
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন দাবি করেছিলেন ইউক্রেনে ব্যবহারের জন্য সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে রাশিয়াকে সরাসরি সহায়তা করার কথা বিবেচনা করছে চীন। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বেইজিং।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকির পর বিশ্বের বৃহত্তম রপ্তানিকারক চীন কি বাণিজ্য শুল্ক বা নিষেধাজ্ঞার মুখোমুখি হতে পারে এমন প্রশ্ন করা হলে হোয়াইট হাউজের মুখপাত্র জেন সাকি এক নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞা অবশ্যই একটি হাতিয়ার।’’
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২৩ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ২৪তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/