ঘরে বসেই চুম্বন করা যাবে হাজরে আসওয়াদ
পবিত্র কাবা ঘরে রক্ষিত হাজরে আসওয়াদ ছোঁয়ার জন্য এখন থেকে আর কাবায় যেতে হবে না। ঘরে বসেই ছোঁয়া যাবে মহা পূণ্যময় এই পাথরটি। বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে 'হাজরে আসওয়াদ ছুঁয়ে' দেখতে পারবেন মুসলিমরা।
ভার্চুয়াল রিয়েলিটি বা ভিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে মুসলমানদের জন্য 'হাজরে আসওয়াদ ছুঁয়ে' দেখার সুযোগ করে দিতে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি সরকার । এই ভার্চুয়াল প্রকল্পের উদ্বোধন করেন মক্কা ও মদিনার পবিত্র দুই মসজিদের জেনারেল প্রেসিডেন্ট শেখ ডক্টর আবদুল রহমান বিন আবদুল আজিজ আল-সুদাইস।
এর আগে চলতি বছরের মে মাসে সৌদি কর্তৃপক্ষ হাজরে আসওয়াদের কাছ থেকে তোলা একটি ছবি প্রকাশ করে। মক্কা-মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের পরিচালনা পর্ষদ প্যারানমিক ফোকাস ব্যবহার করে হাজরে আসওয়াদের ওই ছবি ধারণ করেছিল।
'ভার্চুয়াল ব্ল্যাক স্টোন ইনিশিয়েটিভ' নামে এই প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো ভার্চুয়াল রিয়েলিটি এবং ডিজিটাল অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সত্যিকারের অনুভূতি দেওয়া। মুসলামfনদের বিশ্বাস- বিখ্যাত হাজরে আসওয়াদ বা কালো পাথরটিকে জিব্রাইল (আ.) বেহেশত থেকে এনে হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) দিয়েছিলেন। এজন্য হাজরে আসওয়াদকে বলা হয় জান্নাতি পাথর। হাজরে আসওয়াদ পবিত্র কাবা শরিফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে মাতাফ থেকে দেড় মিটার (চার ফুট) উঁচুতে অবস্থিত।
হাদিসের গ্রন্থগুলোতে হাজরে আসওয়াদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে প্রচুর আলোচনা এসেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘হাজরে আসওয়াদ একটি জান্নাতি পাথর, তার রং দুধের চেয়ে বেশি সাদা ছিল। এরপর বনি আদমের পাপরাশি এটিকে কালো বানিয়ে দিয়েছে।’ সূত্র:জামে তিরমিজি: ৮৭৭, মুসনাদে আহমাদ, ১/৩০৭, ৩২৯।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, 'হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম জান্নাতের ইয়াকুত বা দীপ্তিশীল মূল্যবান মণি থেকে দুটি ইয়াকুত। আল্লাহ্ তাআলা এই দুটির আলোকপ্রভা নিম্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির আলোকপ্রভা যদি তিনি নিস্তেজ করে না দিতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত।' সূত্র: তিরমিজি, মিশকাত।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা বরকতময় কাজ হিসেবে ইসলামে স্বীকৃত। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন এ পাথর আবু কুবাইস পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তার একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, বায়তুল্লাহর জিয়ারতকারীরা কে কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে বক্তব্য দেবে। ’ সূত্র: ইবনে খুজায়মা: ৪/২২১, মুসতাদরাকে হাকেম: ১/৪৫৭।
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি, 'হাজরে আসওয়াদ ও মাকামে ইবরাহিম জান্নাতের ইয়াকুত বা দীপ্তিশীল মূল্যবান মণি থেকে দুটি ইয়াকুত। আল্লাহ্ তাআলা এই দুটির আলোকপ্রভা নিম্প্রভ করে দিয়েছেন। এ দুটির আলোকপ্রভা যদি তিনি নিস্তেজ করে না দিতেন তাহলে তা পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে যা কিছু আছে সব আলোকিত করে দিত।' সূত্র: তিরমিজি, মিশকাত।
ইসলামপূর্ব কোরাইশদের যুগে কাবা শরিফের গিলাফ যখন পুড়ে গিয়েছিল, তখন হাজরে আসওয়াদও পুড়ে গিয়েছিল। ফলে তার কৃষ্ণতা আরো বৃদ্ধি পায়।
রাসুলের নবুয়তপূর্ব সময়ে কাবা পুনর্নির্মাণের পর হাজরে আসওয়াদ আগের স্থানে কে বসাবেন, এটি নিয়ে কোরাইশদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেঁধেছিল। তখন মহানবী (সা.) নিজের গায়ের চাদর খুলে তাতে হাজরে আসওয়াদ রেখে সব গোত্রপ্রধানকে চাদর ধরতে বলেন। গোত্রপ্রধানরা চাদরটি ধরে কাবা চত্বর পর্যন্ত নিয়ে গেলে নবী করিম (সা.) নিজ হাতে তা কাবার দেয়ালে স্থাপন করেন এবং দ্বন্দ্বের পরিসমাপ্তি ঘটান। আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (রা.)-এর শাসনামলে হাজরে আসওয়াদ ভেঙে তিন টুকরো হয়ে গিয়েছিল। ফলে তিনি তা রুপা দিয়ে বাঁধাই করেছেন। আর তিনিই সর্বপ্রথম হাজরে আসওয়াদকে রুপা দিয়ে বাঁধানোর সৌভাগ্য অর্জনকারী।
উপরোক্ত প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে মুসলমানেরা বিশ্বের সব প্রান্ত থেকে খুব কাছে থেকে দেখতে পারবেন এই মূল্যবান পাথর। নিতে পারবেন চুম্বনের দুর্লভ স্বাদ।
কেএফ/