ন্যাটো-ইইউর উপর ক্ষোভ ঝাড়লেন জেলেনস্কি
রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরুর পর শক্ত অবস্থান না নেওয়ায় ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। জেলেনস্কি বলেন, ‘ইইউ যে স্বাধীন আর পরাধীন রাষ্ট্রের জন্য একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে রেখেছে সেটি একবারেই পরিষ্কার। এ কারণেই ন্যাটো বা ইইউ ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর গোলার আঘাত ঠেকাতে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।’
বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) জার্মানির জাতীয় সংসদের নিয়মিত অধিবেশনে কিয়েভ থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
বক্তব্যে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘ইতিহাসের সবচেয়ে ঘৃণিত ব্যক্তি’ হিসেবেও অভিহিত করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। জেলেনস্কি বলেন, ‘বিশ্ব রাজনীতিতে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইতিহাসের সবচেয়ে অমানবিক, যুদ্ধাপরাধী ও অগ্রহণযোগ্য ব্যাক্তি।’ এমনকি চলমান যুদ্ধে জার্মানির ভূমিকা নিয়েও তিনি হতাশা প্রকাশ করেছেন।
ইউক্রেন প্রেসিডেন্টের এমন বক্তব্যে আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয় জার্মানির জাতীয় সংসদে। এ সময় জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজসহ সব সংসদ সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদের উপর রাশিয়ার হামলার বিচারের দাবি জানিয়ে জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘দৃপ্তকণ্ঠে বলতে চাই পুতিনকে তার পরিণতি ভোগ করতেই হবে।’ এদিকে জার্মানির সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে রাশিয়ার বিপক্ষে যেকোনো রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ নিয়ে জার্মানির অনীহা কিংবা কখনো কখনো বিব্রত হওয়ার ঘটনা তার জন্য পীড়াদায়ক।’
এমনকি ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে পূর্বসাগরে গ্যাসলাইন প্রকল্প নর্ডস্ট্রিম-২ নিয়েও জার্মানিকে সমালোচনা করতে ছাড়েননি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট। বক্তৃতায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে ইউক্রেনের যোগদানের সিদ্ধান্তে জার্মানির দোটানায় থাকার বিষয়টিকেও আরও একবার ভাবতে অনুরোধ জানান জেলেনস্কি।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২২ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ২৩তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/