ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ১৫ পরিকল্পনা
ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসনের তিন সপ্তাহ পার হয়েছে। দফায় দফায় আলোচনা হলেও শান্তি কোনো নিশ্চিত রূপরেখা সামনে আসেনি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা যায়, এ যুদ্ধ বন্ধে দুই পক্ষের মধ্যে একটি ১৫ দফা পরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে।
ফিন্যান্স্যাল টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই সম্ভাব্য চুক্তির উল্লেখযোগ্য বিষয়গুলো হলো–যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং তুরস্কের মতো মিত্রদের থেকে সুরক্ষার বিনিময়ে ইউক্রেনে বিদেশি সামরিক ঘাঁটি বা অস্ত্রশস্ত্রের অনুমতি না দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। সেই সঙ্গে ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সদস্য হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা পরিত্যাগ করে এবং তার সশস্ত্র বাহিনীর সীমাবদ্ধতা স্বীকার করে নেয়, তাহলে রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধ করার কথা ভাববে।
এদিকে, ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক তৎপরতা বন্ধ করতে বুধবার (১৫ মার্চ) রাশিয়াকে নির্দেশ দেয় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অফ জাস্টিস। ‘রাশিয়ান ফেডারেশন অবিলম্বে ইউক্রেনে স্থগিত করুক’ নির্দেশ দেন বিচারকরা। তারা আরও বলেন, রাশিয়াকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে যে, তার নিয়ন্ত্রণাধীন বা মস্কো দ্বারা সমর্থিত অন্যান্য বাহিনী যেন সামরিক অভিযান না চালায়।
মস্কো কিয়েভের উপর হামলার শুরু করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তার রুশ প্রতিপক্ষ ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ইউক্রেনে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ ও ভয়াবহতা সৃষ্টি করছে রাশিয়া।
তবে পশ্চিমা বিশ্ব বেশি বাড়াবাড়ি করলে পরমাণু যুদ্ধ কিংবা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের হুমকি দিয়ে রেখেছে মস্কো। এ অবস্থায় নতুন কৌশল নিয়ে আর্থিকভাবে পুতিনকে কাবু করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা। দেশে দেশে জব্দ করা হচ্ছে রাশিয়ার সম্পদ। বিশ্ববাজারে রাশিয়ার তেল বিক্রির উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এ পর্যন্ত কয়েক দফা বৈঠকের পরও মিলছে না সমাধান। থামছে না রাশিয়া ও ইউক্রেনের লড়াই। একদিকে যুদ্ধ চলছে, অন্যদিকে দীর্ঘ হচ্ছে মৃত্যুর মিছিল। জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘এই উন্মাদনা বন্ধ করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ শেষ করার একমাত্র উপায় হলো পুতিনের আক্রমণ বন্ধ করা এবং ইউক্রেন থেকে রুশ সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া। এই পাগলামি শেষ করার এটাই উপায়। প্রেসিডেন্ট পুতিন উদ্দেশ করে লিন্ডা থমাস গ্রিনফিল্ড বলেন, হত্যা বন্ধ করুন, আপনার বাহিনী প্রত্যাহার করুন এবং সবাইকে ইউক্রেন ছেড়ে যেতে বলুন।’
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
২২ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ২৩তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/