পুতিনের দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত জেলেনস্কির
রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকে বিভিন্ন সময়ে রুশ বাহিনীকে মোকাবিলায় উত্তেজক বক্তব্য দিয়ে আসছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তবে এবার যখন রাজধানী কিয়েভ পতনের দ্বারপ্রান্তে, তখন রাশিয়ার দাবি মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন তিনি। জানিয়েছেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা প্রস্তুত তিনি।
রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি জানায়, শনিবার (১২ মার্চ) এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানিয়েছেন জেলেনস্কি। তিনি বলেন, ইউক্রেন এবং রাশিয়ার প্রতিনিধিদের একটি দল বেশ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করছে। কেবলমাত্র আল্টিমেটাম ছুঁড়ে না দিয়ে তারা সংকট সমাধানের বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছে।
তবে রাশিয়ার সঙ্গে যে কোনো ধরনের আলোচনা নিরপেক্ষ কোনো জায়গায় অনুষ্ঠিত হওয়া উচিত বলেও মনে করছে কিয়েভ। আর এ ধরনের আলোচনার সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে ইসরায়েলের নাম নিয়ে জেলেনস্কি বলেছেন, আমরা ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি। কারণ, যুদ্ধ নিয়ে রাশিয়া কিংবা বেলারুশে কোনো সভার আয়োজন করা ঠিক নয়। আমি মনে করি, এ জন্য ইসরায়েলই সঠিক স্থান হতে পারে।
জেলেনস্কি জানান, আলোচনা সফল হতে হলে আগে ইউক্রেনকে ‘নিরাপত্তার নিশ্চয়তা’ দিতে হবে। এ ছাড়া চলমান সংঘাত শুধুমাত্র রাশিয়ার দৃষ্টিকোণ থেকে নয়, পশ্চিমের দৃষ্টিকোণ থেকেও নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন।
এর আগে, চলমান সংকট সমাধানের জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে সরাসরি আলোচনার প্রয়োজন হতে পারে বলে জানান রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ।
লাভরভ বলেন, ‘আমরা নিশ্চিত করেছি যে জেলেনস্কির সাথে বৈঠকের সম্ভাবনা প্রত্যাখ্যান করেননি প্রেসিডেন্ট পুতিন। আমি ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবাকে মনে করিয়ে দিয়েছি যে সংকট সমাধানের জন্য সব সময় প্রস্তুত রাশিয়া। কিন্তু শুধু বৈঠকের জন্যই বৈঠক করে কোনো লাভ নেই।’
পুতিন ও জেলেনস্কির মধ্যে বৈঠকের বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সম্ভবত কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে এ ধরনের আলোচনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে। তবে এটি হওয়ার জন্য প্রস্তুতিমূলক নানা কাজ করা উচিত।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মস্কো এবং কিয়েভের প্রতিনিধি দল ইতিমধ্যেই তিন দফা আলোচনা করেছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য কোনো সমঝোতায় আসতে পারেননি তারা।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
সতের দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ১৮তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রাশিয়ার বিশাল সেনাবহর। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/