ইউক্রেনকে দ্রুত সদস্য করতে নারাজ ইইউ
ইউক্রেনের প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করলেও সে দেশকে দ্রুত ইইউ সদস্য করতে রাজি নন ইউরোপীয় নেতারা। রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানির প্রশ্নেও তাদের মতপার্থক্য দূর করা যাচ্ছে না।
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার হামলার তীব্র নিন্দা, রাশিয়ার উপর কড়া নিষেধাজ্ঞা, অস্ত্রসহ নানা ভাবে ইউক্রেনের সহায়তার প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঐক্য অটুট রয়েছে। কিন্তু প্যারিসের উপকণ্ঠে ভার্সাইয়ে ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের প্রথম দিনে ইউক্রেনের অন্যান্য অনুরোধ ও দাবি মানতে নারাজ ছিলেন না সরকার প্রধানরা। বিশেষ করে ইইউ সদস্যপদের আবেদনের ক্ষেত্রে ‘ফাস্ট ট্র্যাক' পদ্ধতিতে সব প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া চালিয়ে স্বীকৃতি দিতে প্রস্তুত নন তারা।
তাদের মতে, ইউক্রেন এখনো ইইউ সদস্যপদের সব পূর্বশর্ত পূরণ করতে পারছে না। তাছাড়া এমন প্রক্রিয়া এখনো পর্যন্ত অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী৷ বলকান অঞ্চলের কিছু দেশ বহু বছর ধরে সেই জটিলতার মুখোমুখি রয়েছে। সে সব দেশকে পেছনে ফেলে ইউক্রেন আগেভাগে এমন সুবিধা পেতে পারে না৷ এমনকি কিছু পূর্বশর্ত পূরণ না করলে আনুষ্ঠানিকভাবে সে দেশকে যোগদানের প্রার্থী হিসেবেও স্বীকৃতি দেওয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়।
ন্যাটোর মতো ইইউ-র সদস্য হিসেবে আক্রান্ত হলেও বাকি সদস্যরা সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সহায়তা করতে বাধ্য৷ অর্থাৎ ইউক্রেন এখনই ইইউ সদস্য হলে রাশিয়ার চলমান হামলার ক্ষেত্রে ইইউ দেশগুলিকে সামরিক ও আরো সক্রিয় সহায়তা করতে বাধ্য হবে। তখন রাশিয়াও ইউরোপের উপরেও হামলা চালানোর কারণ হাতে পাবে। ন্যাটো ও ইইউ এই মুহূর্তে এমন ঝুঁকি এড়িয়ে চলতে অত্যন্ত সতর্কতা দেখাচ্ছে।
সরাসরি সদস্যপদ না দিলেও ইউক্রেনকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আরও সম্পৃক্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন শীর্ষ নেতারা। ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচিতে সে দেশ অংশ নিতে পারবে। অনেক বৈঠকে পর্যবেক্ষক হিসেবেও উপস্থিত থাকতে পারেন ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা। বিশেষ করে বাল্টিক অঞ্চলের সাবেক সোভিয়েত প্রজাতন্ত্রগুলি ইউক্রেনকে ইইউ-র সঙ্গে দ্রুত সম্পৃক্ত করার পক্ষে বাড়তি আগ্রহ দেখাচ্ছে।
ইউক্রেনের উপর হামলার দুই সপ্তাহ পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ সম্পর্কেও আলোচনা করছেন ইইউ নেতারা। দীর্ঘমেয়াদে সে দেশ থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করলেও এই মুহূর্তে পেট্রোলিয়াম, গ্যাস ও কয়লার সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে প্রস্তুত নয় কিছু সদস্য দেশ। জার্মানি, অস্ট্রিয়া ও হাঙ্গেরির মতো দেশ সাফ জানিয়ে দিয়েছে, যে এখনই এর কোনো বিকল্প দেখা যাচ্ছে না। অথচ জ্বালানি রপ্তানি করে রাশিয়া দিনে প্রায় ৬০ কোটি ইউরো আয় করে। ইউক্রেনে সামরিক হামলাও সেই অর্থ দিয়েই চালানো হচ্ছে বলে সমালোচকরা বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছেন। অ্যামেরিকা যত সহজে রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি বন্ধ করতে পেরেছে, ইউরোপের নিজস্ব স্বার্থে তা আপাতত সম্ভব হচ্ছে না।
সূত্র: ডয়চে ভেলে