ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের জীবাণু অস্ত্র গবেষণা, বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদ
জীবাণু অস্ত্র উৎপাদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে ইউক্রেনের কয়েকটি গবেষণাগারে বিপজ্জনক রোগজীবাণু নিয়ে পরীক্ষা চলছিল বলে অভিযোগ রাশিয়ার। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাইডেন প্রশাসন। রাশিয়ার অনুরোধে এ বিষয়ে আলোচনার জন্য শুক্রবার (১১ মার্চ) বৈঠকে বসছে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে মার্কিন সংবাদ সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এ খবর জানিয়েছে।
এর আগে জাতিসংঘে মার্কিন মিশনের মুখপাত্র অলিভিয়া ডাল্টন বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) রাতে বলেন, ‘রাশিয়া নিজেই জৈবিক বা রাসায়নিক অস্ত্রের হামলা চালাতে পারে এবং এর ন্যায্যতা দেওয়ার জন্য তারা অন্য দেশের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ আনতে পারে বলে আমরা আগেই সতর্ক করেছি।’
অলিভিয়া আরও বলেন, ‘জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে আমরা রাশিয়ার বিকৃত তথ্য প্রচারের জায়গা হিসেবে ব্যবহার করতে দেব না।’
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভের বরাতে রুশ সংবাদমাধ্যম আরটি জানায়, মার্কিন অর্থায়নে ইউক্রেনে নির্মিত বায়ো-ল্যাবরেটরিতে বাদুড়ের শরীর থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছিল–দেখা গেছে জব্দ করা নথিতে।
রুশ কর্মকর্তাদের দাবি, পাখি, বাদুড় এবং সরীসৃপের রোগজীবাণুর ওপর কাজ করতে চাইছিল যুক্তরাষ্ট্র। এ ছাড়া এসব প্রাণীর রোগজীবাণু আফ্রিকান সোয়াইন জ্বরের ভাইরাস এবং অ্যানথ্রাক্স সংক্রমণ করতে পারে কি না, তা-ও গবেষণা করার পরিকল্পনা ছিল ওয়াশিংটনের।
এর আগে, গত সপ্তাহে ইউক্রেনের কয়েকটি গবেষণাগার রুশ বাহিনী দখলে নেওয়ার পর সেখান থেকে জব্দ করা নথির উদ্ধৃতি দিয়ে বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) মস্কো দাবি করে, জীবাণু অস্ত্র উৎপাদনের জন্য ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থায়নে পরিচালিত কয়েকটি গবেষণাগারে উচ্চ সংক্রমণশীল করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য বিপজ্জনক রোগজীবাণু নিয়ে পরীক্ষা চলছিল।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র কোনাশেনকভের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় ইউক্রেনের বায়ো-ল্যাবে বিজ্ঞানীরা অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি রাশিয়া, ইউক্রেন এবং প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে স্থানান্তরিত বন্য পাখিদের মাধ্যমে প্যাথোজেন (রোগ সংক্রামক জীবাণু) সংক্রমণের সম্ভাবনার দিকে নজর রাখছিলেন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
পনেরো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ১৬তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/