পুতিনের মৃত্যু কামনা করা যাবে ফেসবুকে
নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ কোনো সহিংসতা সমর্থন করে না। তবে সেই অবস্থান এড়িয়ে রাশিয়া ও দেশটির সেনাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা প্রচার করা যাবে বলে জানিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের নিয়ন্ত্রণাধীন প্ল্যাটফর্ম মেটা। সেই সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মৃত্যু কামনাতেও থাকছে না বিধিনিষেধ।
বৃহস্পতিবার (১০ মার্চ) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে। মেটা প্ল্যাটফর্মের একটি অভ্যন্তরীণ ইমেইলের বরাত দেওয়া হয়েছে এতে। এর মধ্য দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি তাদের বিদ্বেষপ্রচার নীতিতে অস্থায়ী পরিবর্তন এনেছে।
রাশিয়া, ইউক্রেন ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলোতে পুতিন ও বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মৃত্যু কামনাও করা যাবে। অর্থাৎ সহিংসতা ও উসকানি নীতিতে পরিবর্তন এনে অস্থায়ীভাবে ব্যবহারকারীদের রাশিয়াবিরোধী ঘৃণাপ্রচারের সুযোগ দিচ্ছে মেটা। এ ছাড়া ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইরত উগ্র জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠী আজভ ব্যাটালিয়নের প্রশংসারও অনুমোদন দিয়েছে ফেসবুক, যা আগে নিষিদ্ধ ছিল।
ইউক্রেন আগ্রাসন নিয়ে কোনো পোস্ট দিলে সেখানে রাশিয়ার নাগরিকদের বিরুদ্ধে সহিংসতার প্রচার করা যাবে। মেটা বলছে, রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে সহিংসতা উসকে দেওয়া যাবে। কারণ তারা রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর ছায়া হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু যুদ্ধবন্দিদের ক্ষেত্রে এই নীতি কার্যকর হবে না।
এ নিয়ে রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি মেটা প্ল্যাটফর্ম। তবে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, ইস্তোনিয়া, জর্জিয়া, হাঙ্গেরি, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, পোল্যান্ড, রোমানিয়া, রাশিয়া, স্লোভাকিয়া ও ইউক্রেনে ফেসবুকের নতুন সহিংসতা প্রচারের নীতি প্রয়োগ করা যাবে।
এর আগে রাশিয়ায় ফেসবুক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটিতে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমের প্রবেশ সীমিত করে দেওয়ার জবাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টুইটারসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি কোম্পানির বিরুদ্ধে ধরপাকড় চালিয়েছে রাশিয়া।
সংঘাত নিয়ে খবরাখবর সীমিত করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে অধিকাংশ সামাজিকমাধ্যম। ইউরোপে রাশিয়ার সংবাদমাধ্যম আরটি ও স্পুটনিকনিউজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
মেটার মুখপাত্র জো ওসবোন আগে বলেছিলেন, ইউক্রেনের পক্ষে প্রতিরোধ গড়তে আজভ ব্যাটালিয়নের প্রশংসা করা যাবে। সম্প্রতি সামাজিকমাধ্যমের নীতিমালায় এই ব্যতিক্রমী পরিবর্তন আনা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
পনেরো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ১৬তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/