পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞায় পুতিনের হুমকি
তেল-গ্যাস রাশিয়ার সম্পদই শুধু নয়, বড় হাতিয়ারও। আর এতে দেওয়া নিষেধাজ্ঞা দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে যে হজম করাটা খুব সহজ হবে না, তা আগে থেকে আঁচ করা যাচ্ছিল। এবার পশ্চিমাদের উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন এবং আরও নিষেধাজ্ঞার হুমকিও দিয়েছেন পুতিন। আর এতে বিশ্ব অর্থনীতিও হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
চলতি বছরের শেষ নাগাদ মস্কোয় বিদেশি অন্তত দুই শতাধিক পণ্য রফতানি নিষিদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া। এর আওতায় রয়েছে কৃষি পণ্য, বৈদ্যুতিক-প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি, গাড়ি, কন্টেইনার এবং টারবাইনসহ নানা খাত। এ সিদ্ধান্তের কারণে ক্ষতির মুখে পড়বে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ প্রায় ৪৮টি দেশ, এমনটাই বলছে ক্রেমলিন। আর এ অবস্থার জন্য আবারও পশ্চিমাদের দায়ী করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট।
রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাকে অবৈধ বলে উল্লেখ করেছেন পুতিন। সেই সঙ্গে বিদেশি প্রতিষ্ঠানের সম্পদ জব্দেরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি। রাশিয়ায় কার্যক্রম গুটিয়ে নেওয়া বিদেশি কোম্পানিগুলোর সম্পদ রুশ সরকার জব্দ করতে পারে বলে জানিয়েছেন পুতিন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পর যেসব প্রতিষ্ঠান দেশটি থেকে নিজেদের কার্যক্রম বন্ধ করেছে সেসব প্রতিষ্ঠান সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
মস্কো বলছে, রাশিয়ার উপর আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক চাপ অব্যাহত থাকলে বৈশ্বিক অর্থনীতিতেই এর প্রভাব পড়বে। তাই দেশটি থেকে বিদেশিদের বিনিয়োগ প্রত্যাহার সীমিত করাসহ নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে পুতিন প্রশাসন।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেই এসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুতিন। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার বিরুদ্ধে আরোপিত নিষেধাজ্ঞার উপযুক্ত জবাব এবং রুশ অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে এমন সিদ্ধান্তের প্রয়োজন ছিল।’
পুতিন সরকার ইউক্রেনে বিশেষ সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার উপর একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে শুরু করে পশ্চিমা বিশ্ব।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
পনেরো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ চলছে যুদ্ধের ১৬তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/