ইউক্রেন যুদ্ধে শি জিং পিংকে মধ্যস্থতার অনুরোধ
রাশিয়ার সামরিক অভিযানে বিধ্বস্ত ইউক্রেন। যুদ্ধ বন্ধে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বন্ধু চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংকে অনুরোধ জানিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ এবং জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ।
মঙ্গলবার (০৮ মার্চ) ফ্রান্স ও জার্মানির রাষ্ট্রপ্রধানরা চীনা প্রেসিডেন্টকে এ অনুরোধ জানান। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
ঘণ্টাব্যাপী এক ভিডিও কনফারেন্সে মাখোঁ ও শলৎজ কূটনৈতিক তৎপরতার অংশ হিসেবে চীনের শি জিং পিংকে ইইউ ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে মধ্যস্থতার জন্য অনুরোধ জানান। এ সময় ইউক্রেনের বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘অস্থিতিশীল ও অশান্তিপূর্ণ’ বলে আখ্যা দিয়েছেন চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিংপিং। দের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। তবে চীনা প্রেসিডেন্ট ইউক্রেনে রুশ বাহিনীর হামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য না করে তা এড়িয়ে যান।
রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধ ও মানবিক সংকট নিরসনে শুরু থেকেই দফায় দফায় বৈঠকে বসছেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও পশ্চিমা বিশ্বের নেতারা। এরই ধারাবাহিকতায় রাশিয়ার মিত্র চীনের শরণাপন্ন হলো ফ্রান্স ও জার্মানি।
ওলাফ শলৎজ বলেন, আমরা চাই ইউক্রেনে যুদ্ধের এখানেই ইতি টানা হোক। এই যুদ্ধের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট পুতিন কখনোই জয়ী হতে পারবেন না। তবে দেশটিতে মানবিকতা ভুলুণ্ঠিত হবে। আমাদের সবার সংলাপে বসা প্রয়োজন। তবে সবার আগে ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত বিভিন্ন শহরে সাধারণ নাগরিকদের বাঁচাতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মানবিক করিডোর খুলে দিতে হবে।
মাখোঁ বলেন, আমরা জানি চীনের সঙ্গে রাশিয়ার কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে। তাই এ অঞ্চলে সংঘাত নিরসনে দেশটি বড় ভূমিকা রাখতে পারে।
তবে কদিন আগেও চীন জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে রাশিয়ার বিরুদ্ধে ভোট দিতে অস্বীকার করে। কৌশলগতভাবে সব ধরনের সংকট ও যে কোনো পরিস্থিতিতে রাশিয়ার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেয়। আর তাই কৌশলগত কারণে রাশিয়ার বিপক্ষে গিয়ে চীন ইইউর অনুরোধ রাখবে কি না, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
তের দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১৪তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/