ম্যাকডোনাল্ড ও কোকাকোলাকে বয়কট করছেন পশ্চিমারা
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে একের পর এক বহুজাতিক কোম্পানি রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছে। যে অজুহাতই দেওয়া হোক না কেন, পশ্চিমা ভোক্তাদের ধরে রাখতেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোম্পানিগুলো। তবে এ ব্যাপারে ম্যাকডোনাল্ড ও কোকাকোলা রয়েছে নীরব দর্শকের ভূমিকায়। এতে করে কোম্পানি দুটির বিরুদ্ধে খেপেছে পশ্চিমা ভোক্তারা। তারা ম্যাকডোনাল্ড ও কোকাকোলা বয়কটের ডাক দিয়েছেন।
মূলত পশ্চিমা ভোক্তা সমাজের চাপের মুখেই বাজার ধরে রাখতে রাশিয়ায় ব্যবসা চালানো থেকে পিছপা হয়েছে বহুজাতিক বিখ্যাত সব কোম্পানি। তবে এখন পর্যন্ত এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি ম্যাকডোনাল্ড ও কোকাকোলা।
এতে ক্ষুব্ধ হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ম্যাকডোনাল্ড ও কোকাকোলাকে বয়কটের ডাক দিয়েছেন পশ্চিমা ভোক্তারা।
ম্যাকডোনাল্ডের ওয়েবসাইট পর্যালোচনা করে দেখা যায়, রাশিয়ায় কোম্পানিটির ৮৪৭টি দোকান রয়েছে। বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ম্যাকডোনাল্ড ফ্রানচাইজির মাধ্যমে ব্যবসা চালালেও রাশিয়ার বেশিরভাগ দোকানের মালিকানা ম্যাকডোনাল্ডের নিজের।
সোমবার (৭ মার্চ) টুইটারের ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগে পরিণত হয় #বয়কটম্যাকডোনাল্ড ও #বয়কটকোকাকোলা হ্যাশট্যাগদুটি। এ ব্যাপারে ড্রাগনস ডেনের প্রখ্যাত বিনিয়োগকারী ডেবোরাহ মেইডেন তার টুইটার পেজে লিখেন, ‘আমরা কি কোকাকোলা খাওয়া ছেড়ে দিতে পারি না? কোম্পানিটি রাশিয়া থেকে তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। সাধারণ মানুষের ক্ষমতা সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই।’
বিশেষ করে রাশিয়া থেকে কেএফসি, পেপসি, স্টারবাকস ও বার্গার কিং তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পরে কোকাকোলা ও ম্যাকডোনাল্ডের এমন নির্লিপ্ততা পশ্চিমা ভোক্তা সমাজকে খেপিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ইনস্টিটিউট ফর বিজনেস ইথিকসের ব্যবস্থাপক ইয়ান পিটার আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসিকে বলেন, ‘এখন মুনাফা তোলার সময় নয়। এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগার সময়ও নয়। এমন একটি সংকটকালীন অবস্থায় বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কীভাবে আচারণ করছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
বারো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১৩তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/