আজ রাশিয়ায় যুক্ত হচ্ছে ইউক্রেনের চার অঞ্চল
ইউক্রেনের চার প্রদেশ খেরসন, ঝাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করতে শুক্রবার (৩০ সেপ্টম্বর) আনুষ্ঠানিক চুক্তি সই করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) ক্রেমলিনের প্রেস সেক্রেটারি ও মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ মস্কোতে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এ জানিয়েছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শুক্রবার এসব প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ডের অংশ হিসেবে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন।
এ উপলক্ষে দেশজুড়ে বিশেষ নিরাপত্তায় রেড স্কয়ারে একদল সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। এদিকে পশ্চিমা বিশ্ব এই পদক্ষেপের সমালোচনা করে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে।
রয়টার্স জানায়, রাশিয়ার মস্কোর ক্রেমলিন হলে এ উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। স্থানীয সময় বেলা ৩টায় এই অনুষ্ঠান শুরু হবে।এতে অনুষ্ঠানিকভাবে নথিপত্রে সই করবেন। এ ছাড়া ক্রেমলিন ওয়াল থেকে একটু দূরে রেড স্কয়ারে একটি কনসার্টেরও আয়োজন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, গণভোটের পর এই চার অঞ্চলের শাসকের আহ্বানে সাড়া দিতে তাদের রুশ ফেডারেশনের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এ–সংক্রান্ত নথিতে স্বাক্ষরের পর পুতিন গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন।
তবে রেড স্কয়ারে যে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে, সেখানে পুতিন যাবেন কি না, তা নিশ্চিত নয়। তবে ২০১৪ সালে ক্রিমিয়ার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর ঠিক একই রকম একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। সেই সময় অবশ্য রেড স্কয়ারে গিয়েছিলেন তিনি।
এর আগে ইউক্রেনর ওই চার প্রদেশ রাশিয়ায় যুক্ত হবে কি না তার জন্র একটি ভোটের আয়োজন করা হয়। এতে ৯৯ শতাংশ ইউক্রেনীয় রাশিয়ায় যুক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে জানায় রুশ কর্তৃপক্ষ।
যদিও গতকাল বৃহস্পতিবার জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার তথাকথিত গণভোটের কোনো মূল্য নেই। এতে বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন হবে না। ইউক্রেনের আঞ্চলিক অখণ্ডতা ফিরিয়ে আনা হবে। রুশ পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেওয়া হবে।
এর আগেও তিনি বলেছিলন, জনগণতে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। একই সঙ্গে ভোটের চার দিন লোকজনকে এলাকার বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি।
এদিকে ইউক্রেনের এই চার প্রদেশকে রাশিয়ায় যুক্ত করায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন এরই মধ্যে রাশিয়ার ওপর আরও নিষেধজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দিয়েছে। তবে ইইউর পক্ষ থেকে যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে, সেটি নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। হাঙ্গেরি বলেছে, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় জ্বালানি থাকলে তারা তাতে সমর্থন দেবে না।
রাশিয়ার মিত্র হিসেবে পরিচিত সার্বিয়া, কাজাখস্তানও বলছে, রাশিয়ার এই পদক্ষেপের স্বীকৃতি তারা দেবে না। আর ইউক্রেন ও রাশিয়াকে আলোচনার টেবিলে বসানো তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানও পুতিনের এই পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়েছেন।
এরদোয়ান এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এটিকে ‘কূটনীতির ব্যর্থতা’ বলেও উল্লেখ করেছেন। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এরদোয়ান বলেন, ‘ইউক্রেনের দখলকৃত অঞ্চলে গণভোট এবং তারপর সেসব অঞ্চলকে রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত করার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এটি আমাদের সবার জন্যই উদ্বেগজনক এবং….আমি একে আন্তর্জাতিক কূটনীতির ব্যর্থতা বলব।’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যাপরটি উদ্বেগজনক এই কারণে যে, আমি পুতিনকে জানি। একবার যদি তিনি কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে সেখান থেকে ফিরে আসা বা মত পরিবর্তন করা তার স্বভাবে নেই। ফলে ইউক্রেনের চারটি প্রদেশ রাশিয়া যুক্ত হচ্ছে...এটা এখানেই থেমে থাকবে না। অদূর ভবিষ্যতে ইউক্রেনের আরও এলাকা রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত হবে।’
ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনে সামরিক অভিযানে খেরসন, ঝাপোরিঝঝিয়া, দোনেৎস্ক ও লুহানস্কের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়েছে রুশ বাহিনী।
এসএন