রাশিয়ার পথে যাওয়া মানব করিডোরকে ‘অনৈতিক’ বলল ইউক্রেন
ইউক্রেনের কয়েকটি শহরের বেসামরিক বাসিন্দাদের সরে যেতে সুযোগ করে দিতে যে কয়েকটি মানবিক করিডোরের ঘোষণা দিয়েছে রাশিয়া, সেগুলো বেলারুশ অথবা রাশিয়ার দিকে গেছে বলে জানা যাচ্ছে। আর এ রুশ প্রস্তাবকে ‘পুরোপুরি অনৈতিক’ বলে উল্লেখ করেছে ইউক্রেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ খবর জানিয়েছে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদামির জেলেনস্কির একজন মুখপাত্র বলেছেন, ‘ইউক্রেনের বাসিন্দাদের তাদের বাড়িঘর ছেড়ে ইউক্রেনের ভূখণ্ডের ভেতর দিয়েই যাতায়াত করার সুযোগ থাকা উচিত।’
এক লিখিত বিবৃতিতে ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘এটা পুরোপুরি অনৈতিক একটি ব্যাপার। মানুষের দুর্দশাকে ব্যবহার করে টেলিভিশনের গল্প তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।’
এদিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের একজন মুখপাত্র বলেছেন, বেসামরিক নাগরিকদের বেলারুশ বা রাশিয়ায় চলে যেতে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য ফরাসি প্রেসিডেন্ট অনুরোধ করেছেন বলে যে কথা প্রচার করা হচ্ছে, তা সঠিক নয়।
এক বিবৃতিতে ওই মুখপাত্র বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলাপচারিতায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট রাশিয়ায় যাওয়া কোনো করিডোরের জন্য প্রস্তাব করেননি। তিনি বেসামরিক মানুষজনকে (যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে) যেতে দেওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেছেন এবং জরুরি সহায়তা নিয়ে যানবাহন যেতে দিতে বলেছেন। নিজের মতো করে ঘটনা ব্যাখ্যা করতে এটা প্রেসিডেন্ট পুতিনের আরেকটি চেষ্টা। তিনি দেখাতে চান, দেখো, ইউক্রেনই আগ্রাসী আর তারাই সবার জন্য আশ্রয় দিচ্ছে।’
এর আগে রাশিয়ার আরআইএ নভোস্তি বার্তা সংস্থা যে মানব করিডোরের যেসব রুট প্রকাশ করেছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে যে, বেসামরিক বাসিন্দাদের শহর ছাড়ার এসব পথ হয় বেলারুশ অথবা রাশিয়ার দিকে গেছে।
কিয়েভ থেকে বের হওয়ার যে পথ দেখানো হয়েছে, সেটি গেছে রাশিয়ার মিত্র দেশ বেলারুশে। খারকিভ থেকে বের হওয়ার একটি পথ রয়েছে আর সেটি রাশিয়ায় চলে গেছে। তবে মারিউপোল এবং সুমি থেকে বের হওয়ার যে পথগুলো দেখানো হয়েছে, সেসব পথ ইউক্রেনের অন্য শহরের পাশাপাশি রাশিয়ার দিকেও গেছে।
প্রসঙ্গত, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন। বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত পূর্ব ইউক্রেনের ওই অঞ্চলে গত আট বছরের লড়াইয়ে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন।
এগারো দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। সাময়িক যুদ্ধবিরতি শেষে আজ চলছে যুদ্ধের ১২তম দিন। রাজধানী কিয়েভ ঘিরে রেখেছে রুশ সেনারা। ইউক্রেনে হামলা শুরুর পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/