ইউক্রেনের অনুরোধেও যুদ্ধে জড়াবে না ন্যাটো
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির অনুরোধ সত্ত্বেও রাশিয়া বিরুদ্ধে যুদ্ধে জড়াবে না বলে স্পষ্ট জানিয়েছেন পশ্চিমা সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ। তবে ইউরোপের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখলে নেওয়ায় রাশিয়া ইউরোপের জন্য বড় হুমকি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইউক্রেনের সবচেয়ে বড় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র দখল ও দেশটির সাধারণ নাগরিকদের উপর রাশিয়ার চলমান সামরিক হামলা ঠেকাতে ন্যাটোর কাছে আকাশ, স্থল ও জলপথে সামরিক সহযোগিতার চেয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমিয়ার জেলেনস্কি; কিন্তু সেই আবেদন নাকচ করেছেন ন্যাটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ।
শুক্রবার (৪ মার্চ) ব্রাসেলসে চলমান সংকট নিরসনে ডাকা ইইউর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে স্টলটেনবার্গ জানান, রাশিয়ার বিপক্ষে কিংবা ইউক্রেনের হয়ে সরাসরি যুদ্ধে অংশ নেওয়ার আপাতত কোনো পরিকল্পনা ন্যাটো বাহিনীর নেই। এমনকি ইউক্রেনের আকাশসীমা রক্ষার পরিকল্পনাও ইইউর নেই।
জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেন, ন্যাটো প্রতিরক্ষামূলক জোট। আমাদের মূল লক্ষ্য ৩০টি দেশকে নিরাপদ রাখা। আমরা এ যুদ্ধের অংশ নই। তবে এ যুদ্ধ যাতে ইউক্রেনের বাইরে ছড়িয়ে না পড়ে সে দায়িত্ব আমাদের রয়েছে।
বৈঠকে ইইউ ও ন্যাটো বাহিনীর কাছে সহযোগিতা চান ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা। তিনি বলেন, পুতিন ইউক্রেনকে আরেক সিরিয়া বানাতে চায়। সময় থাকতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে এখনই যুদ্ধ থামানোর আহ্বান জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলজ। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপে তিনি বলেন, ইউক্রেনে রাশিয়া যে বর্বোরচিত হামলা চালাচ্ছে তা অমানবিক, নিন্দনীয় এবং মানবতাবিরোধী। তাই অবিলম্বে ইউক্রেনে হামলা বন্ধসহ বেসামরিক নাগরিকদের নিরাপত্তা ও ‘নো ওয়ার জোন’ তৈরির আহ্বান জানান শলজ।
এ সময় ইউক্রেনকে অস্ত্র দিয়ে জার্মানির সহায়তার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে এ ধরনের সহযোগিতা উসকানিমূলক বলে মন্তব্য করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ইউক্রেনের সাধারণ মানুষের সঙ্গে বিরোধ নয় বরং দেশটিতে ঘাঁপটি মেরে বসে থাকা নাৎসীদের নির্মূলই মস্কোর প্রধান লক্ষ্য।
এদিকে সবকিছু ঠিক থাকলে ইউক্রেন ইস্যুতে চলতি সপ্তাহে আবারো দুই দেশের রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে আলোচনার কথা রয়েছে।
এরপর গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
নয় দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ যুদ্ধের দশম দিন। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। শহরটি ঘিরে রেখে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/