মৃত্যুর আগে রুশ সেনার চিঠি
‘মা, নিরপরাধকেও ছাড়ছি না! ওরা আমাদের ফ্যাসিস্ট বলছে’
ছবি: এএফপি
ষষ্ঠ দিনের মতো চলছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাশিয়ার বর্বরতা ফুটে উঠেছে মৃত্যুর আগে মাকে লেখা দেশটির এক সেনার চিঠিতে।
ক্রিমিয়ায় যুদ্ধে নিহত ওই সেনা তার মাকে পাঠানো শেষ বার্তায় লেখেন, ‘মা, আমি এখন ইউক্রেনে। এখানে সত্যিই যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। আমি ভয় পাচ্ছি। একসঙ্গে সব শহরে বোমা বর্ষণ করছি আমরা। এমনকি সাধারণ মানুষকেও আক্রমণ করছি... খুব কষ্টের মা।’
সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে ডাকা একটি বিশেষ অধিবেশন ডেকেছিল রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদ। সেখানে ইউক্রেনের পরিস্থিতি বোঝাতে যুদ্ধে নিহত এক রুশ সেনার এই শেষ বার্তা পাঠ করে শোনান ইউক্রেন রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, কীভাবে ইউক্রেনের সাধারণ নাগরিকদেরও রাশিয়ার হামলার বলি হতে হচ্ছে তা চিঠিতে স্পষ্ট।
নিহত ওই সেনা আরও লেখেন, ‘আমাদের বলা হয়েছিল, ইউক্রেন নাকি স্বাগত জানাবে। এখানে এসে দেখলাম, তারা আমাদের সাঁজোয়ার নিচে পড়ছে, চাকার তলায় নিজেদের নিক্ষেপ করছে। কোনোভাবেই আমাদের ইউক্রেনে ঢুকতে দিতে চান না তারা। মা, ওরা আমাদের ফ্যাসিস্ট বলে ডাকে। এটা খুব কঠিন।’
চিঠিতে রুশ সেনার মা জানতে চান, ছেলের ঠিকানা এখন কী, তার কাছে পার্সেল পাঠানো যাবে? উত্তরে ছেলেটি লেখে, ‘ইউক্রেনে আছি। গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলতে ইচ্ছে করছে।’
রাষ্ট্রপুঞ্জের ভরা সভায় মা-ছেলের এই বার্তা পড়ে একটু থামলেন ইউক্রেনের প্রতিনিধি। তার পর বললেন, ‘আপনারা এই বার্তালাপের নিরিখে যুদ্ধের তীব্রতা অনুধাবন করার চেষ্টা করেন। ভেবে দেখেন, এই অধিবেশনে উপস্থিত প্রতিটি দেশের নেমপ্লেটের পাশে দাঁড়িয়ে আছে এমন ৩০ নিহত রুশ সেনার আত্মা। প্রতিটি দেশের পাশে…’
উল্লেখ্য, গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
এদিকে আজ ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভের ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসিলকিভে একটি তেলের ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে কিয়েভবাসীকে বিশেষ সতর্ক থাকার কথা বলেছে ইউক্রেন সরকার।
রাজধানী কর্তৃপক্ষ রাজধানীবাসীকে বিষাক্ত ধোঁয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে। কিয়েভের বাসিন্দাদের ঘরের জানালা ভালো করে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রুশ হামলার তৃতীয় রাতে কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠে। মধ্যরাতের আগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
পাঁচ দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ যুদ্ধের ষষ্ঠ দিন। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
সূত্র: আনন্দবাজার
আরএ/