পরমাণবিক অস্ত্র প্রতিরোধী দলকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ
রুশ রুবলের রেকর্ড পতন
ইউক্রেন সামরিক অভিযান শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার উপর চাপছে একের পর এক নিষেধাজ্ঞা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বেশকিছু আন্তর্জাতিক সংগঠন কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে চলেছে ভ্লাদিমির পুতিনের রাশিয়ার উপর। যার ফলে ডলারের বিপরীতে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের রেকর্ড পতন লক্ষ্য করা গেছে।
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আক্রমণের পর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার কারণে সোমবার ডলারের বিপরীতে রাশিয়ান রুবল প্রায় ৩০ শতাংশ কমেছে। দাবি করা হচ্ছে, এটা একটা রেকর্ড পতন। অফশোর ট্রেডিংয়ে রুবল প্রতি ডলারে ২৮.৪৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ডলারপ্রতি ১১৯ রুবলে ঠেকেছে।
রাশিয়ার সঙ্গে চলমান উত্তেজনা ও যুদ্ধ নিয়ে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের পাশাপাশি পোলিশ প্রেসিডেন্ট আন্দ্রেজ দুদার সঙ্গেও কথা বলেছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। এই কথোপকথনে রাশিয়াকে যৌথভাবে জবাব দিতেও সম্মত হয়েছে তিন দেশ। এক টুইট বার্তায় জেলেনস্কি বলেছেন, রবিবার এই দুই রাষ্ট্রপ্রধানের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
সবমিলিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অভিন্ন পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে দেশগুলো। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং সামরিক জেনারেল স্টাফকে দেশের পরমাণবিক অস্ত্র প্রতিরোধী দলকে (ডেটারেন্স ফোর্সেস) প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দিয়েছেন। ফলে রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘর্ষ শেষমেশ পরমাণু যুদ্ধের দিকে গড়াতে চলেছে কি না, তা নিয়েও সংশয় দেখা দিয়েছে। অনেক দেশ এর কড়া সমালোচনাও করেছে।
এদিকে, ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, সোমবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের জরুরি বিশেষ অধিবেশন বসবে। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করবেন সাধারণ পরিষদের ৭৬তম অধিবেশনের সভাপতি আবদুল্লাহ শহিদ। বিশেষ করে পরমাণু প্রতিরোধী দলকে কেন তৈরি থাকার নির্দেশ দিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে। হয়তো বা সেসব নিয়েও আলোচনা হতে পারে ওই বৈঠকে।
উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার পুতিনের যুদ্ধঘোষণার পরই রাশিয়ার বাজারে শেয়ার সূচকে ৩৩ শতাংশ পতন ঘটে। ডলারের নিরিখে রাশিয়ার মুদ্রা রুবলের রেকর্ড পতন ঘটে। ফোর্বস জানিয়েছে, রাশিয়ার শীর্ষ পাঁচ ধনকুবের–আলেকপেরভ, মিখেলসন, মোরদাশভ, পোতানিন এবং কেরিমভ সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
গত ২১ ফেব্রুয়ারি সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রুশপন্থী বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত ইউক্রেনের দুই অঞ্চল দোনেৎস্ক ও লুহানস্ককে স্বাধীন রাষ্ট্র ঘোষণা করেন। সেখানে ‘শান্তি রক্ষায়’ সেনা পাঠানোর নির্দেশ দেন তিনি। এরপর উত্তেজনা নতুন মাত্রা পায়। একই সঙ্গে ‘প্রজাতন্ত্র’ দুটিতে রুশ সেনাদের ‘শান্তিরক্ষী’ হিসেবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। পুতিনের এই পদক্ষেপের পর পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক আগ্রাসন শুরু করে দিয়েছে।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সকালে টেলিভিশনে দেওয়া এক ভাষণে পূর্ব ইউক্রেনের বিদ্রোহীনিয়ন্ত্রিত ডনবাস অঞ্চলে বিশেষ সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন।
এদিকে আজ ইউক্রেনে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রাজধানী কিয়েভের ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ভাসিলকিভে একটি তেলের ডিপোতে ভয়াবহ আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এতে কিয়েভবাসীকে বিশেষ সতর্ক থাকার বথা বলেছে ইউক্রেন সরকার।
রাজধানী কর্তৃপক্ষ রাজধানীবাসীকে বিষাক্ত ধোঁয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে বলেছে। কিয়েভের বাসিন্দাদের ঘরের জানালা ভালো করে বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। রুশ হামলার তৃতীয় রাতে কিয়েভে বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠে। মধ্যরাতের আগে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার সতর্কতা দেওয়া হয়েছিল।
চার দিনের যুদ্ধে ইউক্রেনের একাংশ এখন রাশিয়ার দখলে। আজ যুদ্ধের পঞ্চম দিন। রাজধানী কিয়েভ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে রুশ সেনারা। এ হামলা শুরু পর থেকে একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে পশ্চিমা শক্তিগুলো। তবে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো বা অন্য কোনো পশ্চিমা শক্তিধর দেশ সামরিক হস্তক্ষেপ করতে এগিয়ে আসেনি।
এসএ/