ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে দাঁড়াল ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য

ছবি: সংগৃহীত
ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পূর্বঘোষিত পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে ইউরোপের দুই প্রভাবশালী দেশ—ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য। আগামী ১৭ থেকে ২০ জুন নিউইয়র্কে অনুষ্ঠেয় আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার যে প্রস্তুতি চলছিল, তা বাতিল করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সংশ্লিষ্ট কূটনীতিকরা।
শনিবার (৭ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, শুরুতে ফ্রান্স এই স্বীকৃতি দেওয়াকে "নৈতিক দায়িত্ব ও রাজনৈতিক প্রয়োজনীয়তা" হিসেবে দেখেছিল। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁ আশা করেছিলেন, সৌদি আরব যদি ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়, তাহলে পাল্টা হিসেবে ফিলিস্তিনকেও রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া যেতে পারে।
তবে বাস্তবতা ভিন্ন। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ফরাসি কর্মকর্তারা ইতোমধ্যেই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন যে, নিউইয়র্ক সম্মেলনে কোনও স্বীকৃতির ঘোষণা আসছে না। এর পরিবর্তে কিছু শর্ত নির্ধারণ করা হচ্ছে, যেমন—গাজায় স্থায়ী যুদ্ধবিরতি, ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি, ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাঠামোগত সংস্কার, অর্থনৈতিক পুনর্গঠন এবং হামাসের রাজনৈতিক প্রভাব কমানো।
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জঁ-নোয়েল বারো জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়া একটি প্রতীকী সিদ্ধান্ত হলেও, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে ফ্রান্সের মিত্রদের সমর্থন ছাড়া একতরফাভাবে এমন পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব নয়।
এই সিদ্ধান্তে হতাশা প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের সাবেক নির্বাহী পরিচালক কেনেথ রথ। তিনি সতর্ক করে বলেন, এভাবে শর্ত আরোপের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের স্বীকৃতি অনির্দিষ্টকালের জন্য পিছিয়ে যেতে পারে। তার মতে, স্বীকৃতিকে ইসরায়েলের ওপর রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
উল্লেখ্য, এখন পর্যন্ত বিশ্বের ১৪৭টি দেশ ফিলিস্তিনকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিলেও ইউরোপের অধিকাংশ দেশ এখনো দ্বিধায় রয়েছে। তাদের মতে, এই স্বীকৃতি কার্যকর হতে হলে তা আরব রাষ্ট্রগুলোর অংশগ্রহণ এবং ইসরায়েলের সম্মতির ভিত্তিতে হতে হবে।
এর আগে আয়ারল্যান্ড, স্পেন ও নরওয়ে একতরফাভাবে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন বার্তা দিয়েছিল। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক চাপে পড়ে ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্য তাদের অবস্থান থেকে সরে আসে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এদিকে, ইসরায়েল এই পরিস্থিতির প্রতিক্রিয়ায় অধিকৃত পশ্চিম তীরে নতুন করে ২২টি বসতি নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ একে ‘কৌশলগত পদক্ষেপ’ বলে উল্লেখ করেছেন, যা ফিলিস্তিন রাষ্ট্র গঠনের পথে আরও বড় বাধা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
