সিরিয়ার আসাদ সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড কে এই জোলানি?
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি। ছবি: সংগৃহীত
সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদ সরকারের পতন হয়েছে বলে দাবি করেছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট বিদ্রোহী গোষ্ঠী হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস)। গোষ্ঠীটির নেতা আবু মোহাম্মদ আল-জোলানি এই ঘোষণা দিয়েছেন। যাকে বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিদ্রোহীরা রাজধানী দামেস্কে ঢুকে পড়তেই অজানা গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রাজধানী ত্যাগ করেছেন প্রেসিডেন্ট।
২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ গত কয়েক বছরে বেশ নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল রাশিয়া ও ইরানের সহায়তায়। তবে শেষ রক্ষা আর হলো না। হঠাৎই গত ১০ দিনের ঝড়ে উল্টে গেল বাশার আল-আসাদের মসনদ।
সরকার পতনের মাস্টারমাইন্ড কে এই জোলানি?
আবু মোহাম্মদ আল-জোলানির আসল নাম আহমেদ হুসাইন আল-শারা। ১৯৮২ সালে তিনি সৌদি আরবের রিয়াদে জন্মগ্রহণ করেন। তখন তাঁর বাবা সেখানে পেট্রোলিয়াম প্রকৌশলী হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৮৯ সালে তাঁর পরিবার সিরিয়ায় ফিরে আসে। দামেস্কের অদূরে বসতি স্থাপন করে।
২০০৩ সালে সিরিয়া থেকে ইরাকে এসে তিনি আল-কায়েদায় যোগ দেন। এই বছরই যুক্তরাষ্ট্র ইরাকে হামলা চালায়। তিনি সেখানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী প্রতিরোধ আন্দোলনে যোগ দেন। তখন থেকে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে।
২০০৬ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাদের হাতে গ্রেপ্তার হন জোলানি, পাঁচ বছর পর ২০১১ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের সময় মুক্ত হন তিনি। কারামুক্ত হয়ে সিরিয়ায় আল-কায়েদার শাখা প্রতিষ্ঠা করেন জোলানি, যা আল-নুসরা ফ্রন্ট নামে পরিচিত।
জোলানির কার্যক্রম:
কারামুক্ত হয়ে ২০১১ সালে আল-কায়দার সরাসরি সহযোগী হিসেবে জাবহাত আল-নুসরা নামে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এইচটিএস গোষ্ঠী। সশস্ত্র গোষ্ঠীটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নেতা আবু বকর আল-বাগদাদি।
প্রথম দিকের কয়েক বছর জোলানি বাগদাদির সঙ্গে কাজ করলেও ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে বাগদাদি আকস্মিকভাবে আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেন। এরপর জোলানি সিরিয়ায় নিজেদের তৎপরতা বৃদ্ধিতে কাজ শুরু করেন।
২০১৬ সালের জুলাইয়ে বাশার সরকার আলেপ্পোর নিয়ন্ত্রণ নেয়। তখন বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো ইদলিবের দিকে চলে যায়। ওই সময়টাতে জোলানি আল-নুসরা ফ্রন্টের নাম পরিবর্তন করে জাভাত ফাতেহ আল-শাম রাখেন। পরে বিদ্রোহীদের ছোট ছোট অনেক গোষ্ঠী ও নিজের জাভাত ফাতেহ আল-শাম নিয়ে এইচটিএস গঠন করেন জোলানি। গোষ্ঠীটিকে প্রেসিডেন্ট আসাদ-বিরোধী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কার্যকর এবং প্রাণঘাতী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
হায়াত তাহরির আল-শাম (এইচটিএস) ২০১৭ সালে সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট প্রতিষ্ঠা করে। এর মাধ্যমে তারা দেশটির ইদলিবে প্রশাসন পরিচালনা শুরু করে। তবে অধিকারকর্মী, সংবাদ প্রতিবেদন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের মতে,সিরিয়ান স্যালভেশন গভর্নমেন্ট কঠোর হাতে শাসন করে, বিরোধীদের সহ্য করে না।
এইচটিএস মূলত ইদলিব কেন্দ্রিক ছিলো এবং অনুমান করা হয় গোষ্ঠীটির প্রায় ৩০ হাজার যোদ্ধা রয়েছে। এই গোষ্ঠী মূলত স্ব-অর্থায়নে পরিচালিত হয়ে থাকে।
বিদ্রোহী গোষ্ঠীদের লড়াই:
সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সূচনা ২০১১ সাল থেকে। সে সময় বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলি সিরিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল। প্রাথমিকভাবে তারা খানিকটা অগ্রসরও হতে পেরেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে হামায় আসাদ সরকার বিপুল পরিমাণ সেনা মোতায়েন করে। শুরু হয় প্রবল গৃহযুদ্ধ। আসাদ সরকার বিদ্রোহীদের দমন করতে সমর্থ হয়। সে সময় আসাদ সরকারকে সবরকমভাবে সাহায্য করেছিল ইরান এবং রাশিয়া।
সিরিয়ার উত্তর-পূর্ব অঞ্চল বিশেষ করে ইদলিব এলাকা এখন এইচটিএস-এর দখলে। অন্তত ৪০ লাখ উদ্বাস্তু সিরিয়ার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ইদলিবে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন।
দামেস্কের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারের ফটক খুলে দিল বিদ্রোহীরাদামেস্কের কুখ্যাত সেদনায়া কারাগারের ফটক খুলে দিল বিদ্রোহীরা
তবে নতুন করে গৃহযুদ্ধ শুরু হয় সিরিয়াতে। গত ২৭ নভেম্বর থেকেই বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো সিরিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর আলেপ্পো দখলের পর আরও অগ্রসর হতে থাকে। একে একে শহর ও অঞ্চল দখল করতে থাকেন তারা।
বিশ্লেষকদের অনেকেই বলছেন, আসাদ সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বিদ্রোহী গোষ্ঠী এইচটিএস লড়েনি, তুরস্কের ছত্রছায়ায় থাকা সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি বা এসএনএ-এর একটি অংশও লড়াইয়ে জড়িত রয়েছে। এছাড়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীদেরও সমর্থন দিয়েছে তুরস্ক।