জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-সমর্থিত উপদেষ্টাদের পদত্যাগের দাবির বিষয়ে জনমত থেকে দৃষ্টি সরাতে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের ‘নাটক’ সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।
শুক্রবার (২৩ মে) বিকেলে রাজধানীর পুরানা পল্টনের আলরাজি কমপ্লেক্সের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এ অভিযোগ করেন তিনি। বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের উদ্যোগে আয়োজিত এ সমাবেশে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমের পদত্যাগ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজের অপসারণ ও গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়।
রাশেদ খান বলেন, “গতকাল প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগের গুঞ্জন ছড়ানো হয়েছিল। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তিনি পদত্যাগ করেননি। উপদেষ্টা ও নেতাদের আচরণে বিরক্ত হয়ে তিনি সতর্ক করে বলেছেন, তারা সংযত না হলে তিনি দায়িত্ব পালন করবেন না। এই বক্তব্যকে ঘিরেই ‘পদত্যাগ’ নাটক সাজিয়ে জনমতের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে নেওয়ার চেষ্টা চালানো হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “একজন উপদেষ্টা বলেছেন, তারা শুধু নির্বাচনের জন্য দায়িত্ব নেননি। কিন্তু ১০ মাসেও রাষ্ট্র সংস্কার কিংবা গণহত্যার বিচার হয়নি। বরং সংস্কারের নামে উপদেষ্টাদের ঘনিষ্ঠরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের এপিএস দুর্নীতিতে জড়ালেও তাকে কোনো জবাবদিহির মুখোমুখি করা হয়নি। এছাড়া নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকে প্রশাসক পদে নিয়োগের ব্যাখ্যাও তিনি দিতে পারেননি।”
গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অভিযোগ করেন, “উপদেষ্টা মাহফুজ আলম নৈরাজ্য ও অনৈক্য সৃষ্টি করেছেন, আর আসিফ মাহমুদ দুর্নীতির মাধ্যমে উপদেষ্টা পরিষদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছেন। এ কারণে এই দুইজনকে শপথ ভঙ্গের দায়ে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। একই সঙ্গে প্রশাসক এজাজকে অপসারণ ও গ্রেপ্তার করতে হবে। অন্যথায় উপদেষ্টা পরিষদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে।”
ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে রাশেদ খান বলেন, “আমরা ড. ইউনূসের পদত্যাগ চাই না। বরং দায়িত্ব শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমরা তাকে দায়িত্বে রাখার পক্ষে। তবে তার দল ভালো খেলছে না। ভালো দল ছাড়া ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হওয়া গেলেও পুরো ম্যাচ জেতা যায় না। তাই রাষ্ট্র সংস্কার ও গণহত্যার বিচার করতে হলে উপদেষ্টা পরিষদের পুনর্গঠন জরুরি।”
তিনি জানান, “আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা এবং ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন জরুরি। তার আগে গণহত্যার বিচার ও রাষ্ট্র সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। যদিও কিছু উপদেষ্টা নির্বাচনী ক্ষমতার লোভে প্রধান উপদেষ্টাকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছেন।”
সমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের মুখপাত্র ফারুক হাসান বলেন, “উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম শপথ ভঙ্গ করেছেন। তারা শুধুমাত্র রাজনৈতিক কৌশলহীনতাই নয়, বরং ড. ইউনূসকেও বিতর্কিত করতে চাইছেন। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা ড. ইউনূসের পাশে আছি।”
বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন বলেন, “জুলাই মাসের মর্যাদা ও জাতীয় ঐক্য রক্ষা করতে হলে, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলমকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় তাদের অপসারণের দাবিতে প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হবে এবং ঢাকা সিটি কর্পোরেশন ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
সমাবেশে আরও বক্তব্য রাখেন যুব অধিকার পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনতাজুল ইসলাম, ঢাকা মহানগর উত্তর গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি মিজানুর রহমান, দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজিম উদ্দীন, শ্রমিক অধিকার পরিষদের সভাপতি আব্দুর রহমান, যুব অধিকার পরিষদের উত্তর মহানগর সভাপতি রাহুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হোসাইন নুর, দক্ষিণ মহানগরের সভাপতি জাহাঙ্গীর হিরণ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুর রহমান শুভ এবং সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম।