প্রেমিকা খুনে সাজাপ্রাপ্ত আসামীকে ক্ষমা করে ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠালেন পুতিন
ছবি:সংগৃহীত
রাশিয়ান বাহিনীর হয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে যেতে রাজি হওয়ায় প্রেমিকা খুনে সাজাপ্রাপ্ত ভ্লাদিস্লাভ কানিউসকে ক্ষমা করে দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। নিজের প্রেমিকা ভেরা পেখতেলেভাকে নৃশংসভাবে হত্যার দায়ে কানিউসের ১৭ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল আদালত। কিন্তু তিনি এই সাজার মাত্র এক বছর কারাগারে কাটিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যর সংবাদমাধ্যম দ্য সান এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছ।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নিজের প্রেমিকা সম্পর্ক ভেঙে দেওয়ায় প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে নৃশংস অত্যাচারের পর তাকে খুন করেছিল ভ্লাদিস্লাভ নামে ওই যুবক। ১১৭ বার নিজের প্রাক্তন প্রেমিকাকে কোপানোর পাশাপাশি তাকে ধর্ষণও করে সে। এর পর গলায় লোহার তার পেঁচিয়ে প্রেমিকার মৃত্যু নিশ্চিত করে। ওই তরুণীর আর্তনাদ শুনে প্রতিবেশীরা বার বার পুলিশকে ফোন করেন। কিন্তু পুলিশ কোনো সাড়া দেয়নি। এই অপরাধের জন্য ভ্লাদিস্লাভকে ১৭ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয়।
তবে এমন নৃশংস অত্যাচারে অভিযুক্ত যে এত সহজে মুক্তি পেয়ে গিয়েছে, তা কেউ জানতে পারেনি। নিহত ওই তরুণীর মা হঠাৎই সেনা পোশাকে তার মেয়ের হত্যাকারীর ছবি দেখে তাকে চিনতে পারেন। এর পর ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে। ভ্লাদিস্লাভ মুক্তি পেয়ে গিয়েছে জানতে পেরে ভেঙে পড়েন ওই নিহত তরুণীর মা।
ভেরা পেখতেলেভার মা বলেন, ‘মনে হচ্ছে আমি শেষ হয়ে গিয়েছি। এই ঘটনা আমাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের দেশে আইনের শাসন যে নেই, তা জানতে পেরে আমি যেন খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছি। আমি জানি না এর পরে আমি আর কী করব!’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা আমার কাছে বিরাট বড় ধাক্কা। আমার সন্তান সমাধির মধ্যে ছটফট করবে, আমার থেকে সবকিছু কেড়ে নেওয়া হলো। আমার জীবন, আশা, সবকিছু।’
রাশিয়ায় নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা এক সমাজকর্মী বলেন, ভ্লাদিস্লাভকে যে ইউক্রেন সীমান্ত সংলগ্ন দক্ষিণ রাশিয়ার রসটভে পাঠানো হয়েছিল, তা জেল কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে। এই সংক্রান্ত একটি সরকারি চিঠিও প্রকাশ্যে এসেছে, যেখানে দেখা যাচ্ছে যে প্রেসিডেন্টের নির্দেশে গত ২৭ এপ্রিল ভ্লাদিস্লাভকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছে।
নিহত ওই তরুণীর মা তার মেয়ের হত্যাকারীকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য পুতিনকেই দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, একজন খুনিকে কীভাবে হাতে অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করার জন্য ইউক্রেনে পাঠানো হলো? তার আরও প্রশ্ন, ভ্লাদিস্লাভ যে ওই অস্ত্র নিয়ে এখন তার উপরেই হামলা চালাবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? ওই তরুণীর মায়ের অভিযোগ, ‘ভ্লাদিস্লাভ মানুষের পর্যায়েই পড়ে না।’
যদিও নিজেদের সিদ্ধান্তের স্বপক্ষে যুক্তি দিয়েছে রাশিয়ার সরকার। ক্রেমলিনের এক মুখপাত্র বলেন, যারা গুরুতর অপরাধে শাস্তিপ্রাপ্ত, তাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে রক্ত ঝরিয়ে নিজেদের করা অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করতে হচ্ছে।