ইরাকে ৭০ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে পানি খেতে পারে না
২০ বছরের মার্কিন নেতৃত্বাধীন বহি:শত্রুর বিপক্ষে যুদ্ধ ও এর মধ্যে সংঘাতের পর ইরাকের বেশিরভাগ অবকাঠামো ভেঙে পড়েছে। আবার অনেক অবকাঠামোকে অবহেলা করা হয়েছে বলে এখন ৭০ লাখের বেশি ইরাকি শিশু তাদের বিদ্যালয়গুলোতে পানি খেতে পারে না-বলেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তারা। অথচ ইরাকের ২ কোটি ১০ লাখ শিশু হলো তাদের দেশের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যা। তবে তাদের প্রায় অর্ধেকেরই স্কুলগুলোর কোনোটিতেই নিরাপদ পানি নেই। ১০ লাখ শিশুর মানবহিতৈষী সাহায্য প্রয়োজন ও প্রায় ২০ লাখ শিশু বিদ্যালয়ে যায় না। তারা শিশুশ্রমের ব্যাপকতা বাড়ায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করে।
বছরের পর বছর ধরে তাদের দেশটি নিরাপদ পানির নিরাপত্তা তৈরির সমস্যাগুলোর মোকাবেলা করছে। এর মধ্যে যুক্ত হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তনের সংকটগুলো। এগুলোর সবই এই অঞ্চলের শান্তি ও নিরাপত্তাকে আক্রান্ত করছে।
মার্কিন আক্রমণ এই দেশটিকে কসাইখানায় পরিণত করেছে। এই আগ্রাসনের ফলে দুনীতি ও অব্যবস্থাপনা প্রবলভাবে বেড়েছে। ফলে অনেক বিদ্যালয়, হাসপাতাল ও অন্যান্য গুরুত্বর্পূণ অবকাঠামোগুলো আবার তৈরিতে দুর্বলতম গতি লাভ করেছে। এর মধ্যে সেগুলোর অনেকগুলোই দুর্বল মানসম্পন্নভাবে তৈরি হয়েছে। সেগুলো ভেঙে যাচ্ছে ও ভেঙে পড়েছে। এই কারণগুলো প্রবলভাবে শিশুদের আক্রান্ত করেছে।
ইউনিসেফের কমিউনিকেশন বিশেষজ্ঞ অ্যালেক্স রিবুউল-সোলৎজা বলেছেন, ‘ইরাকের ৫০ ভাগ শিশু ছাত্র-ছাত্রী খাবারের পানি পয় নাষ্কাষণ ব্যবস্থা ও হাইজেনিক ব্যবস্থার অভাবে ভুগছে। ওদের হাত ধোয়ার ব্যবস্থাও নেই। ৭২ লাখ ৫০ হাজার ছাত্র, ছাত্রীকে খাবারের পানি খাওয়ার সুবিধা দেওয়া হয়নি। তাদের ৫২ শতাংশই মেয়ে।’
তিনি আরো বলেছেন, ‘লিঙ্গগত স্পর্শকাতর পরিস্কার ব্যবস্থাপনার অভাবে প্রধানত মেয়েরা বিদ্যালয়ে পড়ালেখা থেকে ঝড়ে পড়ছে।’
ইউনিসেফের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ‘ইরাকের চারভাগের এক ভাগ শিশুকে নিয়মিত টিকাদান কমসূচির আওতায় আনা হয়নি।’
তারা জানিয়েছেন, এই দেশের শিশুদের আরেকটি জটিল সমস্যা হলো তারা আয় করে বেঁচে থাকে। আয়ের কাজগুলোই তাদের শিক্ষালাভ।
গত বছর ইরাক রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার পাঁকে আটকে গিয়েছিল এবং প্রতিবাদ-বিক্ষোভকারীরা রাজধানী বাগদাদ ও ধর্মীয় শহর বসরাকে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছিলেন। তখন পুলিশ-বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষে বিদ্যালয় খাতের সরকারী ও জনগণের বিনিয়োগগুলো আক্রান্ত হয়েছিল এবং শিশু ও অল্প বয়সীদের পড়ালেখার প্রবল ক্ষতি হয়েছে। তখনকার অস্থিরতা ও খাদ্য অনিরাপত্তা প্রবলভাবে শিশুদের আক্রান্ত করেছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
তবে এক বছর ধরে রাজনৈতিক হত্যা ও নির্মমতাকে এক ধরনের রূপান্তর করেছে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোহামেদ আল সুদানির নিয়োগ।
ইউনিসেফ আরো জানিয়েছে, ‘ইরাকে ৩৭. ৯ শতাংশ শিশুই দারিদ্রতার মধ্যে বসবাস করে। তাদের অর্ধেকই দুই বা তিনটি মৌলিক মানবাধিকার লাভ করতে পারছে না।’
নতুন ইরাকি সরকার সমাজগুলোর ভেতর দিয়ে তার দেশের শিশুদের জন্য বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ।
তাদের প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে, সবচেয়ে বঞ্চনার শিকার শিশুরা ও যারা বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়েছে ও যারা এখনো শরনার্থী শিবিরগুলোর পরিবেশের মধ্যে বাস করছে, তাদের কাছে পৌঁছানো।
ইরাককে অবশ্যই তার পড়ালেখার পরিবেশকে তীব্রতার সঙ্গে উন্নতি করতে হবে। তার বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো, সুবিধাদি এবং মান বাড়াতে হবে। শিক্ষকদের মানসম্পন্ন করতে হবে ও দেশজুড়ে শিশুদের সাহায্য করতে হবে, জানিয়েছে জাতিসংঘের এই সংস্থাটি।
বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার বয়স এখন গড়ে ১২ থেকে ১৪ বছরে গিয়ে ঠেকেছে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের বিদ্যালয় থেকে ঝড়ে পড়ার হার বেশি। প্রাথমিকে ছেলেদের যেখানে ১০০ শতাংশের মধ্যে ৭.২ শতাংশ বছরওয়ারি ঝরে পড়ছে সেখানে মেয়েরা ১০০ মধ্যে ৯.৬ শতাংশ পড়ালেখা করতে, করতে ছেড়ে দিচ্ছে। নিম্মমাধ্যমিক পর্যায়ে ছেলেদের ১৪.৭ শতাংশ লেখাপড়া প্রতি বছর ছেড়ে দিচ্ছে। আর মেয়েরা এই পর্যায়ে ২৭. ৭ শতাংশই পড়ালেখা বাদ দিচ্ছে। উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ছেলেদের ৩৪.৮ শতাংশ পড়ালেখা ছেড়ে কাজে নামছে আর মেয়েদের এখানে ৪৬.১ শতাংশ পড়ালেখা বাদ দিয়ে বিয়ে করতে বাধ্য হচ্ছে।
প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখার অধিকার বা আর্লি চাইল্ডহুড এডুকেশনের সুবিধাও ইরাকে অত্যন্ত কম। মোটে ১০ ভাগ শিশুর ভাগ্যে এই সুবিধাটি জুটছে। তার মানে হলো ১০টি শিশুর মাত্র ১টি এভাবে পড়তে যেতে পারছে, জানিয়েছে ইউনিসেফ।
ওএফএস/ডিএসএস