৯ বছরে ইয়েমেনে কাটা হয়েছে ৬০ লাখ গাছ!
ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলের পাহাড়গুলো থেকে ইলেকট্রিক করাত ও কুঠার দিয়ে দামী গাছ কাটছেন দেশটির বেপরোয়া নাগরিক। বছরের পর বছর যুদ্ধের ফলে জ্বালানি তেল ও গাছ বিক্রি করে আয় করার জন্য তারা এ অন্যায় কাজে নেমেছেন। ৯ বছরে দেশটিতে ৬০ লাখ গাছ কাটা হয়েছে।
তাইজ শহরের বাইরে পাহাড়ি গাছপালায় পূর্ণ বনে গাছ কাটতে কাটতে হুসেইন আবদুল ওয়াকি বলেছেন, আমাদের জীবনযাপনের আর কোনো উপায় নেই বলে গাছগুলো কাটতে শুরু করেছি ও বিক্রি করছি।
তিনি এবং অন্য কর্মীরা শহরের কাছের এই বনের ধারের একটি ভ্যানে বড় বড় গাছগুলো কেটে রাখছেন। এই বন ও শহরটি হুতু বিদ্রোহীরা ঘেরাও করে রাখলেও এখনো সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
প্রায় নয় বছর ধরে ইয়েমেনে সরকার ও ইরান সমর্থিত হুতুদের মধ্যে যুদ্ধ চলছে। এর ফলে আরবীয় উপদ্বীপের সবচেয়ে গরিব দেশে পরিণত হয়েছে ইয়েমেন। এর মধ্যে রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের ফলে বিশ্ববাজারে তেল ও খাবারের দাম বেড়ে চলেছে। তাতে ভবিষ্যতে আরও দরিদ্র হয়ে যাবেন তারা।
গাছখেকোদের অন্যতম আবদুল ওয়াকি জানালেন যে, তিনি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষকে সাহায্য করতে কাজ করলেও এমন একটি দেশে বাস করছেন যেখানে এখন সুযোগ-সুবিধার চরম অপ্রতুলতা রয়েছে ও এখানে রান্না এবং ঘরে আলো জ্বালানোর জন্য অনেকে তেলই কিনতে পারছেন না।
আমাদের আর কোনো উপায় না থাকলেও এই কাঠগুলো বিক্রি করে খাচ্ছি। আর মানুষদেরও এগুলো না কিনে আর কোনো উপায় নেই, তিনি বলেছেন।
২০১৪ সালে ইয়েমেনের রাজধানী সানা দখল করে নিয়েছিল হুতুরা। তবে সৌদি মিত্রদের সহযোগিতায় পরের বছর আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সরকার রাজধানী আবার দখল করেছে। এরপর থেকে যুদ্ধ চলছে। সরাসরি ও পরোক্ষভাবে দুই পক্ষের শত শত মানুষ মারা গেছে। যুদ্ধে হাজার হাজার নিরীহ মানুষ মারা গেছেন। ক্রমে দেশটি চরম খাদ্য সংকটের দিকে এগিয়ে চলেছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ইয়েমেনের দুই-তৃতীয়াংশ আনুমানিক ২১.৬ মিলিয়ন মানুষ আন্তর্জাতিকভাবে মানবিক সাহায্য ও জীবন বাঁচাতে নিরাপত্তা গ্রহণ করবে।
তাইজ শহরের একটি বেকারিতে পৌঁছেছে গাছভর্তি ট্রাংক। গাছের ডালপালাও কিনছেন অনেকে। সেগুলো কেটে টুকরো, টুকরো করা হচ্ছে ও রুটি বানানোর চুল্লির নিচে দেওয়া হচ্ছে।
চুল্লির সামনে দাঁড়িয়ে বেকারির মালিক আবদেল সালাম দাবওয়ান বলেছেন, গ্যাসের দামের অস্বাভাবিক মূল্য বেড়েছে।
তিনি জানিয়েছেন, কাঠের টুকরোগুলোকে তিনি বিকল্প হিসেবে কম দামে কিনে রুটি বানানোর জন্য ব্যবহার করছেন। আর মানুষের খাবার নিয়ে কাড়াকাড়ি কমাতে রুটির দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আমরা গাছের টুকরোগুলো মানুষের খাবারের প্রয়োজন মেটানোর জন্য ব্যবহার করছি।
গেল বছরের শুরুতে রাশিয়ার ও ইউক্রেনের যুদ্ধ শুরুর পরপরই সরকার নিয়ন্ত্রিত অংশগুলোতে তেলের দাম লাফিয়ে বাড়তে শুরু করেছে। বছরের মাঝামাঝি অংশে তেল কেনার মতো অবস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন জনগণ। তবে এরপর আবার কমেছে। কিন্তু এখন আবার বেড়ে চলেছে।
পরিবেশবিদ আনোয়ার আল শাহজিল বলেছেন, ৬০ লাখেরও বেশি গাছ ইয়েমেনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে কেটে ফেলা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রাজধানী সানার আশেপাশের বনাঞ্চল আছে। এখানের গাছগুলো প্রায়ই রেস্টুরেন্ট ও বেকারিগুলোতে জ্বালানির যোগান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, তাইজ শহরকে বিশেষভাবে বৃক্ষশূন্য করে ফেলা হয়েছে। এর ফলে মাটির নিচের পানির স্তর, কৃষি ব্যবস্থা, বাস্তুসংস্থান প্রবলভাবে আক্রান্ত হয়েছে এবং মাটির ক্ষয় চলছে।
তিনি কর্তৃপক্ষকে গাছ কেটে ফেলা ঠেকাতে অনুরোধ করেছেন এবং পরিবেশ সম্পর্কে একেবারেই অনভিজ্ঞ বৃক্ষকর্তনকারীদের পরিবেশের যে গভীর ক্ষতি তারা করছেন সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের অনুরোধ করেছেন।
তিনি সর্তক করেছেন, যদি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ না করা হয় তাহলে যুদ্ধের পাশাপাশি একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পড়বে ইয়েমেন।
ওএফএস/