ভারতে বিবিসির অফিসে টানা দ্বিতীয় দিন তল্লাশি চলছে
ভারতে দিল্লি ও মুম্বইয়ের বিবিসির দফতরে টানা দ্বিতীয় দিনের মতো তল্লাশি চালাচ্ছে দেশটির আয়কর কর্মকর্তারা।
বুধবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার এ তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
আন্দবাজার বলছে, ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলছে আয়কর দফতরের তল্লাশি। সংবাদসংস্থাটির আর্থিক বিষয়ক ইলেকট্রনিক এবং কাগুজে নথির প্রতিলিপি করা হচ্ছে বলেও জানানো হয়েছে। করফাঁকি মামলা নিয়ে তদন্তে নেমে বিবিসির অফিসে এ তল্লাশি চালাচ্ছে আয়কর দফতর।
প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিয়ে তৈরি করা বিবিসির তথ্যচিত্রকে ভারত সরকারের নিষিদ্ধ করার প্রেক্ষিতে এই আয়কর অভিযান ঘিরে ঘরে বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়ছে কেন্দ্রীয় সরকার
মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে ১১টায় বিবিসির দিল্লির দফতরে হাজির হন অন্তত ১৫ জন আয়কর কর্মকর্তা। শুরু হয় তল্লাশির কাজ। রাত পেরিয়ে পর দিন সকালেও সেই তল্লাশি শেষ হয়নি।
সংবাদসংস্থা পিটিআই সূত্রে খবর, আয়কর দফতরের কর্মকর্তারা বিবিসির আর্থিক বিষয়ক বিভাগের পদাধিকারীদের সঙ্গে কথা বলেন। কথা হয় অন্যান্য কয়েকটি বিভাগের সংবাদকর্মী এবং সাংবাদিকদের সঙ্গেও। তবে মঙ্গলবার রাতে সাংবাদিক ও সংবাদকর্মীদের বাড়ি ফেরার অনুমতি দিয়েছিল আয়কর দফতর। তবে তার আগে অফিসের কয়েকটি কম্পিউটার এবং মোবাইল ফোনকে ক্লোন করে নেন আয়কর কর্তারা।
তবে তল্লাশি করতে গিয়ে রাত শেষ হয়ে গেলেও কেন তা সমাপ্ত করা হয়নি, সে বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য জানায়নি আয়কর দফতর।
সূত্রের বরাতে এনডিটিভি জানিয়েছে, ভারতীয় কর কর্মকর্তারা বুধবার বিবিসির অ্যাকাউন্টগুলোতে মূলদৃষ্টি দেবেন এবং সংস্থাটির জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তাদের প্রশ্ন করবেন।
বিবিসির বিরুদ্ধে অননুমোদিত কর সুবিধা, কর ফাঁকি, মুনাফা গোপন করা, নিয়ম না মেনে চলার মতো বিভিন্ন গুরুতর অভিযোগের তদন্ত করছে ভারতীয় কর কর্তৃপক্ষ। এ বিষয়ে ব্রিটিশ সংস্থাটিকে অতীতে নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা সহযোগিতা করেনি বলে দাবি করেছে ভারত।
অন্যদিকে, আয়কর দফতর যে সঠিক পথেই এগোচ্ছে তা দাবি করে মঙ্গলবারই সংবাদ সম্মেলন করে ক্ষমতাসীন বিজেপি। ফলে বিভ্রান্তি ক্রমশ বাড়ছে। আয়কর দফতরের পক্ষ থেকে এ নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য করা না হলেও মঙ্গলবার বিবিসি টুইট করে জানিয়েছে, তারা ভারতের আয়কর বিভাগের সঙ্গে সমস্ত রকম সহযোগিতা করছেন এবং করবেন।
বিবিসির অফিসে আয়কর দফতরের তল্লাশি নিয়ে ইতোমধ্যেই ভারতজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, মোদিকে নিয়ে সমালোচনামূলক তথ্যচিত্র তৈরি করারই মাসুল দিতে হচ্ছে ইংল্যান্ডের জাতীয় সংবাদমাধ্যমকে। যদিও বিজেপির দাবি, বিবিসি বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুর্নীতিগ্রস্ত সংস্থা।
তবে এই প্রথম নয়, এর আগে একাধিক সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযান চলেছে। অভিযান চলাকালীন বিপুল অঙ্কের আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ ভেসে উঠেছে সূত্রের মাধ্যমেই। বিরোধীদের দাবি, আজ পর্যন্ত একটি অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। বিরোধীদের আরও অভিযোগ, তাৎপর্যপূর্ণভাবে যে সব সংবাদমাধ্যমের দফতরে কেন্দ্রীয় এজেন্সির অভিযান হয়েছে, তারা সকলেই কেন্দ্রীয় সরকারের সমালোচনামূলক সংবাদ পরিবেশন করেছিল। তাহলে কি সমালোচনার মুখ বন্ধ করতেই এই তৎপরতা? মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০২-য়ে গুজরাট হিংসার সময় কী ভূমিকা পালন করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি, দুই পর্বের তথ্যচিত্রে তা তুলে ধরে কি বিবিসিও সেই তালিকায় নিজের নাম তুলে ফেলল? প্রশ্ন বিরোধীদের।
আরএ/