ভালোবাসা দিবসে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে স্মরণ
ভালোবাসা খুঁজে ফেরা মানুষরা তুমুল বেগে ছুটে আসেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের চিরশান্তির স্থান আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনে। ভালোবাসার পৃষ্ঠপোষক এই সাধু ও খ্রিস্টীয় ধর্মযাজক বাস করতেন রোমে। তৃতীয় শতাব্দীতে তাকে সেখানেই সমাহিত করা হয়। অনেক বছর পর সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে আসা হয় ডাবলিনে। ভালোবাসা দিবসে ভালোবাসার খোঁজে তার শবাধারে এসে তাকে স্মরণ করেন অনেকে।
সেন্ট ভ্যালেন্টাইন পোপ ও ভ্যাটিকানের কাছ থেকে পেয়েছেন একজন সাধুর স্বীকৃতি। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডাবলিনে এসেছেন কারণ তিনি ছিলেন একজন আইরিশ (আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করা) ধর্মযাজক এবং তাকে সাধুর পূর্ণ সম্মানের সঙ্গে খ্রিস্টীয় রীতিতে ধর্মযাজকদের নিয়ে চিরবিশ্রামের স্থান পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভ্যাটিকান। ফলে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন ডাবলিনের হোয়াইটফ্রায়ার স্ট্রিট চার্চের বেদির নিচে চিরনিদ্রায় আছেন।
১৮৩৫ সালে একজন কার্মেলিয় বা কার্মেলিট (কার্মেলাইট নামে পরিচিত ১৫৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত এই খ্রিস্টীয় ধর্মসংঘভুক্ত তপস্বী বা তপস্বিনী), একজন আইরিশ খ্রিস্টীয় ধর্মযাজকীয় সন্ন্যাসী-ফাদার জন স্প্যাট তার আইরিশ ধর্মাধিকার পোপ ষোড়শ গ্রেগরির কাছে উত্থাপন করেন ও তাকে তিনি রাজি করাতে আবেদন জানান, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের চিরশান্তির স্থানটি খুঁড়ে তাকে বের করে আনা হোক ও তার অনুসারী আইরিশ পুরুষ ও নারীদের এই বাড়িতে (কার্মেলাইটদের গির্জা) একটি বিশেষ উপহার হিসেবে প্রদান করা হোক। এরপরই তিনি চলে এলেন হোয়াইটফ্রায়ার চার্চের প্রার্থনাকেন্দ্রে।
গেল বছর পর্যন্ত, ভালোবাসা দিবসের বিশেষ ক্ষণে ও ভালোবাসায় বন্দী এবং প্রার্থনারত তরুণ থেকে যুবকরাও তার শবাধারে এসেছেন। হাজার, হাজার কিশোর থেকে যুবক তাদের বিশেষ মানুষকে খুঁজে পেতে তার বেদিতে অর্ঘ্য প্রদান ও প্রার্থনা করেছেন।
একজন নারী দর্শনাথী বলেছেন, ‘ঈশ্বর তার মনে আমার জন্য একজনকে রেখেছেন এবং আমি অবশ্যই এখনো তার সঙ্গে দেখা করতে পারিনি। ফলে কেবল আশা করতে পারি যে, সেন্ট ভ্যালেন্টাইন আমাকে সহায়তা করবেন যাতে আমি তাকে খুঁজে পাই।’
আরেকজন বলেছেন, ‘আমরা কেবল ঠিক মানুষকে পেতে প্রার্থনা করতে পারি। বিশ্বাস করি যে, যখন সঠিক সময় আসবে আমি তার কাছে গিয়ে পৌঁছাব।’
অন্যজন বলেছেন, ‘আমি সবভাবেই চেষ্টা করেছিলাম- ডেটিং ব্যাপকভাবে বাড়িয়েছি, অনলাইনে খুঁজেছি, বাকিসবও অনেক করেছি। এরপর মনে হয়েছে, হয়তো সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে একটি প্রার্থনা উৎসর্গ করলে আমি সাহায্য পেতে পারি।’
একটি জুটি বলেছেন, তারা তাদের খুশির অর্ঘ্য প্রার্থনা নিবেদন করতে ফিরে এসেছেন, কেননা এই পবিত্র স্থানেই চার বছর আগে তাদের প্রথম দেখা হয়েছিল। এখন তারা বিয়ে করার পরিকল্পনা করছেন।
তৃতীয় শতকের খিস্টীয় ধর্মযাজক সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তার যাজকবৃত্তি করতেন খ্রিস্টানদের বিয়েগুলো প্রদানের মাধ্যমে। তিনি রোমে ও ডাবলিনে তার ধর্মীয় সহকর্মীদের ভালোবাসা, বিয়ে ও শান্তিতে উৎসাহিত করে চলেছেন প্রবলভাবে। ফলে তাকে ডাবলিনে পেয়ে সবাই খুব খুশি। তার হোয়াইটফ্রায়ার স্ট্রিট চার্চের এই ধর্মযাজক ফাদার ক্রিস ক্রোলেই বলেছেন, ‘এজন্যই আমাদের সঙ্গে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন রয়েছেন এবং আমরাও তার সঙ্গে থাকতে পেরে খুবই খুশি।’
১৯৫০ সালে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সম্মানে এবং তাকে ভালোবাসা প্রদর্শন করতে গির্জার ভেতরে তার শবাধারে একটি আবক্ষমূর্তি ও পবিত্র বিশেষ স্থান নির্মাণ করা হয়। আরও বহু আগে যখন থেকে আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও ওয়েলসের মানুষ জানতে পারলেন যে, ভালোবাসার পূজারি সেন্ট ভ্যালেন্টাইন তাদের দেশে ডাবলিনে চিরসমাহিত রয়েছেন তখন থেকে তারা বানের পানির মতো তাকে শ্রদ্ধার উদ্দেশে শবধারে আসতে শুরু করেন। তবে কার্মেলিস্ট গির্জার যাজকরা অন্যদের মতো সেন্ট ভ্যালেন্টাইনকে বাণিজ্যের কারিগর করতে রাজি নন। তারা তাকে যথাযোগ্য মর্যাদা প্রদান করেন এবং তাদের উপ-ধর্মীয় সাধুকে বিশেষ সম্মানের সঙ্গে তারা স্মরণ করাতে কাজ করেন।
আরেকজন কার্মেলীয় বা কার্মেলিস্ট ধর্মযাজক ডেভিড উইকলিয়াম বলেছেন, ‘আমরা এটি কেবল একটি ভালোবাসার দিন হোক সেখানে আবদ্ধ থাকতে চাই না। আমরা তাকে পরিপূর্ণ জীবনের ভালোবাসায় সম্মান প্রদর্শন করতে চাই।’
ওএফএস/