তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প: নিহতের সংখ্যা ৬০০ ছাড়াল
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্ত অঞ্চলে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ছয় শতাধিক মানুষ নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। আগামী কয়েক ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে আহত হয়েছেন হাজার হাজার মানুষ।
সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সংবাদমাধ্যম বিবিসি তাদের সবশেষ হালনাগাদ প্রতিবেদনে মৃত্যুর এ তথ্য জানায়।
উদ্ধার কাজ চলমান। ভূমিকম্পের ফলে ভবন ধসে ধ্বংসস্তূপে আটকা রয়েছেন আরও বহু মানুষ।
বিবিসি বলছে, তুরস্কে অন্তত ২৮৪ জন মারা গেছেন। অন্যদিকে সিরিয়ায় মারা গেছেন ৩২০ জন।
তুরস্কের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফুয়াত ওকতেই জানিয়েছেন, তুরস্কে এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ২৮৪। আহত হয়েছেন আরও ২ হাজার ৩২৩ জন। উদ্ধারকাজে নামানো হয়েছে এয়ারক্রাফট। আন্তর্জাতিক সহযোগিতার আহ্বানও জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করেছে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েব এরদোয়ানের প্রশাসন।
অপরদিকে, সিরিয়ায় তিন শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
সিরিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে ভূমিকম্পের আঘাতে ৩২০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ। মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। উদ্ধারকারীরা ধসে পড়া ভবনগুলির ধ্বংসস্তূপে অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন।
স্থানীয় সময় সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূ-কম্পনটির উৎপত্তিস্থলে গভীরতা ছিল ২৪ দশমিক ১ কিলোমিটার। তুরস্কের গাজিয়ান্তেপ প্রদেশের নূরদাগি শহরের পূর্বাঞ্চল থেকে আঘাত হানে এটি।
তুরস্কের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলেও শক্তিশালী আফটারশক অনুভূত হয়েছে। মূল ভূ-মকম্পনটি আঘাত হানার প্রায় ১১ মিনিট পর আরেক দফায় আঘাত হানে ভূমিকম্প। ৬ দশমিক ৭ মাত্রার শক্তিশালী আফটারশক মূল ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের প্রায় ৩২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে আঘাত হানে। ১৯ মিনিট পরে, ৫ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি তীব্র আফটারশক অনুভূত হয়।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমন সোয়লু বলেছেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হলো- গাজিয়ানটেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালত্য, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির এবং কিলিস ভূমিকম্পে অনেক ভবন ধসে পড়েছে এবং ধ্বংসস্তূপের বিশাল স্তূপের নিচে বেঁচে থাকা ব্যক্তিদের সন্ধানে উদ্ধারকারী দল মোতায়েন করা হয়েছে।
ইস্তাম্বুলে থাকা আল-জাজিরার সিনেম কোসেওগ্লু বলেছেন, ভূমিকম্পটি তুরস্ক জুড়ে দক্ষিণ শহর থেকে কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল। তিনি বলেন, গাজিয়ানটেপের মতো শহরগুলোতে তুর্কি নাগরিক ছাড়াও সিরিয়ার শরণার্থীরাও বসবাস করেন। তিনি বলেন, ‘পরিস্থিতি বিবেচনায় আন্তর্জাতিক সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে।
গাজা উপত্যকায় বিবিসির একজন প্রযোজক রুশদি আবুলউফ বলেছেন, তিনি যে বাড়িতে ছিলেন সেখানে প্রায় ৪৫ সেকেন্ড কাঁপুনি ছিল।
তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সানলিউরফা প্রদেশের গভর্নর সালিহ আয়হান টুইটারে বলেছেন, উদ্ধারকাজ চলছে এবং লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছি।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তৎক্ষণাৎ অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এবং কম ক্ষতিসহ এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠব আমরা।
অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব আর্থ অ্যান্ড প্ল্যানেটারি সায়েন্সেসের অধ্যাপক ক্রিস এল্ডার্স সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে বলেছেন, শক্তিশালী ভূমিকম্পের পরে আফটারশকগুলি ‘কয়েক দিন, কয়েক সপ্তাহ, এমনকি কয়েক মাস’ অব্যাহত থাকতে পারে।
আরএ/