পাকিস্তানের মুদ্রায় রেকর্ড পতন, প্রতি ডলার ২৫৫ রুপি
প্রতি ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রা রুপির মান রেকর্ড পরিমাণ পতন হয়েছে। গত বুধবার (২৫ জানুয়ারি) পাকিস্তানি মুদ্রায় প্রতি ডলারের দাম ছিল ২৩০ দশমিক ৯ রুপি। বৃহস্পতিবার সেই দাম হয় ২৫৫ দশমিক ৪ রুপি। অর্থাৎ ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ডলারের বিপরীতে দেশটির মুদ্রার আনুষ্ঠানিক দাম প্রায় ২৩ রুপির বেশি কমেছে। খোলা বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ২৬২ রুপিতে।
দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, গত দুই দশকের মধ্যে এই দরপতন সবচেয়ে বড়।
আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা সিএনএন এক প্রতিবেদনে জানায়, পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলো গত বুধবার দেশটির খোলাবাজারে মুদ্রার বিনিময় হারের সীমা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেয়। এর পরদিনই ডলারের বিপরীতে রুপির বিরাট দরপতন হয়। মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলোর দাবি, দেশের স্বার্থেই খোলাবাজারে মুদ্রা বিনিময় হারের সীমা তুলে নেওয়া হয়েছে। কারণ, এটি পাকিস্তানের অর্থনীতিতে ‘কৃত্রিম’ বিকৃতি ঘটাচ্ছে।
পাকিস্তানি ব্রোকারেজ হাউস জেএস গ্লোবাল জানিয়েছে, ১৯৯৯ সালের পর এই প্রথম মুদ্রার এত বড় দরপতন হল।
ডলারের সংকটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে ঋণ পরিশোধসহ বৈদেশিক লেনদেনে হিমশিম খাচ্ছে পাকিস্তান। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ২০১৯ সালে পাকিস্তানকে ৬০০ কোটি ডলার ঋণসহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। এরপর গেল বছরের বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পর দেশটিকে সাহায্য করার জন্য আরও ১০০ কোটি ডলার সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেয় আইএমএফ। কিন্তু আর্থিক খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনতে ব্যর্থ হওয়ায় গত নভেম্বরে সেই সহায়তা স্থগিত করে সংস্থাটি।
তবে সম্প্রতি আবার পাকিস্তানে সহায়তা কার্যক্রম শুরু করতে রাজি হয়েছে তারা। এ বিষয়ে আলোচনার জন্য জানুয়ারির শেষে একটি প্রতিনিধি দল পাকিস্তানে পাঠাবে বলে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে আইএমএফ। তবে একই সঙ্গে মুদ্রার লেনদেনে বাজার-নির্ধারিত বিনিময় হার ব্যবস্থায় যাওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে তারা। আইএমএফের এমন বিবৃতির এক দিন আগেই পাকিস্তানের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কোম্পানিগুলো দেশটির মুদ্রার বিনিময় হারের সীমা তুলে নেয়।
মুদ্রা বিনিময় কোম্পানি সমিতির সভাপতি মালিক বোস্তান বলেছেন, ‘মুদ্রা বিনিময়ে কালোবাজারি মোকাবিলায় সহযোগিতা করার জন্য আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আন্তব্যাংক বিনিময় হার বাড়াতে অনুরোধ করেছি।’
তবে পাকিস্তানের স্টক এক্সচেঞ্জে অবশ্য রুপির দরপতনে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেএসই ১০০ সূচক আড়াই শতাংশ বেড়ে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তানের শেয়ারবাজারবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আরিফ হাবিব লিমিটেডের গবেষণা প্রধান তাহির আব্বাস বলেন, রুপির অবমূল্যায়ন হলেও এর মাধ্যমে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পথনকশা ও আইএমএফের অর্থায়ন পুনরায় শুরু করার বিষয়ে কিছু অনিশ্চয়তা দূর করছে। এই কারণে শেয়ারবাজারও ইতিবাচক সাড়া দিচ্ছে।
তবে রুপির মান আকস্মিকভাবে কমে যাওয়ায় অসুবিধায় পড়েছে ব্যাংকগুলো। দেশটির বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, আগে যেসব ব্যাংক ২৩০ রুপির বিনিময়ে ডলার ধার নিয়েছিল, তাদের এখন ডলার প্রতি ২৫০ রুপি দরে ধার পরিশোধ করতে হবে।
/এএস